জলের প্রতীক্ষায়। ছবি: শৌভিক দে।
এ যেন ক্ষতে শুধু প্রলেপ দেওয়া। অথচ মূল অসুখ সেই তিমিরেই। সল্টলেকের জল-সমস্যা নিয়ে এমনটাই অভিযোগ বাসিন্দাদের। প্রতিশ্রুতি ছিল, পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ হবে। বন্ধ হবে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার। বদলে ফেলা হবে মান্ধাতার আমলের জলের পরিকাঠামোও।
বাস্তবে অবশ্য বাম আমলের মতো বর্তমান তৃণমূল পুরবোর্ডেও জল-সমস্যা মিটল না। অভিযোগ, জোগান বাড়লেও পরিকাঠামোর সংস্কার না হওয়ায় সমস্যা রয়েছে সেই তিমিরেই। যদিও পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, বাম আমলের তুলনায় সে অর্থে আর জল-সঙ্কট নেই। কিছু এলাকায় সাময়িক সমস্যা চলছে, যা দ্রুত মেটানো হবে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে সল্টলেকের কিছু এলাকায় জলাভাবের অভিযোগ উঠতে থাকে। বাসিন্দাদের দাবি, ৮০০-৯০০ টাকায় পুরসভা থেকে জলের ট্যাঙ্কার নিয়ে গিয়ে চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। এমনকী সম্প্রতি দু’দিন ৯ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জলের দাবিতে পুরসভায় বিক্ষোভ দেখান, ডেপুটেশনও দেন।
কেন এই অবস্থা? পুরসভা সূত্রে খবর, মূল সল্টলেকে মিশ্রিত জল দেওয়া হয়। সংযুক্ত এলাকায় মূলত ভূগর্ভস্থ জলই সরবরাহ হয়। এর মধ্যে কিছু এলাকায় ভূগর্ভস্থ জলের পাইপলাইন আটকে যাওয়ায় জল পেতে সমস্যা হচ্ছে। অন্য দিকে, গরমে জলস্তর নেমে গিয়ে ভূগর্ভস্থ জল পর্যাপ্ত পরিমাণে মিলছে না। ফলে সংযুক্ত এলাকার একাংশে জল যাচ্ছে না।
১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের সুবল রং বলেন, ‘‘এলাকায় জল নেই। বার বার পুরসভাকে বলে প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মিলছে না। বাধ্য হয়ে পুরসভায় গিয়ে জলের দাবি জানান বাসিন্দারা।’’ অথচ দায়িত্বে এসেই বর্তমান পুরবোর্ড জানিয়েছিল, সঙ্কট মেটাতে কলকাতা পুরসভা থেকে প্রতিদিন ১ কোটি গ্যালন জল মিলবে। এ ছাড়া, রাজারহাট ও কলকাতা থেকে জল এনে সল্টলেকে পরিস্রুত পানীয় জলের চাহিদা মেটানো হবে। বন্ধ করা হবে মাটির তলার জলের ব্যবহার।
চাহিদার তুলনায় জোগানের কী হাল? পুরসভা সূত্রে খবর, কলকাতা থেকে গড়ে প্রায় ৮০ লক্ষ গ্যালন জল আসে। বাকি ২০ লক্ষ গ্যালন জল তোলা হয় মাটির তলা থেকে। কিন্তু এ বছর দেখা গিয়েছে, মূল সল্টলেকেও বিশেষত ১ নম্বর সেক্টরে ২৫, ৬, ৮, ৯ নম্বর-সহ কিছু ওয়ার্ডে জল সরবরাহে সমস্যা দেখা দেয়। পাশাপাশি ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডেও সমস্যা তৈরি হয়।
চেয়ারম্যান পারিষদ অশেষ মুখোপাধ্যায় জানান, জল সরবরাহের উন্নয়নে চলতি বছরের মে মাসে ১৭ কোটি টাকার খসড়া প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেখানে দুটি ওভারহেড ট্যাঙ্ক, রিজার্ভার, পাইপলাইনের সংস্কার-সহ একাধিক প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে সংযুক্ত এলাকায় জল সরবরাহে।
সম্প্রতি নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যান বিধাননগরের চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী। তার পরেই জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে, জল সমস্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। যদিও চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জল নিয়ে কোনও কথাই হয়নি। সল্টলেকে জলের কোনও সঙ্কট নেই। কিছু সাময়িক সমস্যা হয়েছে। সেগুলি দ্রুত মেটানো হচ্ছে।’’ কৃষ্ণাদেবীর আরও দাবি, বাম আমলের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ জল দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই পরিকাঠামো উন্নয়নে রাজ্য সরকার বেশ কিছু পরিকল্পনা করেছে। পাশাপাশি দত্তাবাদ ও সংযুক্ত এলাকায় নতুন করে ৩৫০টি বাড়িতে জলের সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে পুরসভা। ফলে অদূর ভবিষ্যতে মিশ্রিত নয়, পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে দাবি করেছেন কৃষ্ণাদেবী।