প্রতীকী ছবি।
কল দিয়ে জল আসছে ঠিকই, তবে সরু ফিতের মতো। চাহিদার তুলনায় যা অনেকটাই কম। বর্তমানে জলের এমনই সঙ্কটে পড়েছেন দমদমের তিনটি পুরসভার একাধিক এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, দু’বেলা কিংবা তিন বেলা করে জল এলেও পরিমাণ পর্যাপ্ত নয়। সেই সঙ্গে আবার জলের অপচয়ও ঘটে চলেছে। সব মিলিয়ে জল নিয়ে সমস্যা তীব্র হয়েছে গরম পড়তেই। সমস্যার কথা কার্যত স্বীকারও করে নিয়েছেন তিন পুরসভার কর্তারা। তবে তাঁদের আশ্বাস, সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে।
দমদমের তিন পুর এলাকাতেই জলের একটি বড় অংশের জোগান আসে কামারহাটি জল প্রকল্প থেকে। কিন্তু বর্তমানে চাহিদার তুলনায় কম জল আসছে। সমস্যাও হচ্ছে সেই কারণেই। সরবরাহের পরিমাণ কমে যাওয়ায় আপাতত তিন পুরসভারই অন্যতম ভরসা ভূগর্ভের জল। অথচ, কোনও পুরসভারই কর্তারা চান না, মাটির নীচের জল ব্যবহার করতে। কেএমডিএ সূত্রের খবর, জলের চাহিদা বছরের এই সময়ে সর্বাধিক থাকে। অথচ, ফি-বছরই বর্ষার আগে এই সময়ে নদীতে জলের প্রবাহ কমে পলির পরিমাণ বাড়ে। মাথাপিছু জলের জোগান ঠিক থাকলেও চাহিদার তুলনায় তা অনেকটাই কম।
সম্প্রতি দক্ষিণ দমদমের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে দু’টি পাম্প চালু করা হয়েছে। সেখান থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ জল। স্থানীয় কাউন্সিলর কেয়া দাস জানালেন, তাঁর ওয়ার্ডে কয়েক হাজার মানুষ এর ফলে উপকৃত হচ্ছেন। ভূপৃষ্ঠের জল পরিমাণ মতো পাওয়া যাচ্ছে না বলেই বাধ্য হয়ে ভূগর্ভের জল ব্যবহার করতে হচ্ছে।
দক্ষিণ দমদমের ছ’নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের স্বামী তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা অভী দেবনাথ সমস্যার কথা স্বীকার করে জানালেন, জলের জোগানে ঘাটতি রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনে জলের ট্যাঙ্কারও পাঠাতে হচ্ছে। একই কথা জানান ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজু সেনশর্মাও। দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার বাসিন্দা সুরভি বসু বললেন, ‘‘অবস্থা এমনই যে, আমাদের জল কিনে খেতে হচ্ছে। এ বার গরম বাড়তেই জলের জোগান কমে গিয়েছে। সরু ফিতের মতো জল আসছে। একটি বালতি ভরতেই অনেক সময় লেগে যাচ্ছে।’’
উত্তর দমদমের বাসিন্দা অমল দাস জানালেন, এই সময়ে এক বারের জায়গায় দু’বার স্নান কিংবা ঘন ঘন জল খাওয়ার জেরে চাহিদা যেমন বাড়ে, তেমনই বিপুল পরিমাণ জলের অপচয়ও ঘটে। ওই পুর এলাকার ছবিটাও কমবেশি এক। পুর চেয়ারম্যান বিধান বিশ্বাস জানালেন, যে পরিমাণ জল কামারহাটি থেকে আসার কথা, নদীতে পলি সংক্রান্ত সমস্যার জেরে তা আসছে না। কার্যত একই কথা জানালেন দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্ট এবং দক্ষিণ দমদমের চেয়ারম্যান পারিষদ মুনমুন চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা জানান, বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে আগামী দিনে কেএমডিএ-র সঙ্গে তাঁরা কথা বলবেন। দক্ষিণ দমদম এবং উত্তর দমদম পুরসভা অবশ্য জানিয়েছে, তারা নিজস্ব জল প্রকল্প চালু করবে। তবে সেই দুই বড় প্রকল্পের কাজ শেষ হতে অনেকটাই সময় লাগবে।
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, গরমে নদীতে পলির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তাই প্রত্যেক বছরই এ সময়ে এমন সমস্যা দেখা দেয়। তাঁর দাবি, জলের মাথাপিছু জোগান ঠিকই রয়েছে। কিন্তু এই সময়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
সব মিলিয়ে দমদমের বাসিন্দারা এখন বর্ষার দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন।