জল-ছবি: বেহালার কালীতলা এলাকায় ঘরে ঢুকে গিয়েছে জল। রবিবার। ছবি: অরুণ লোধ
কোটি কোটি টাকায় কয়েক ধাপে নিকাশির আধুনিকীকরণ হলেও চলতি বর্ষায় কার্যত তা জলে গেল। ফলে বেহাল বেহালার চেনা ছবিটা নামের আগে সেঁটে রইলই।
দু’দিন কেটে গেলেও বেহালা-ঠাকুরপুকুর এলাকার বৃষ্টির জমা জল থেকে নিষ্কৃতি পেলেন না বাসিন্দারা। নোংরা জল মাড়িয়েই চলছে নিত্যদিনের কাজ। শুক্রবার রাতেই অনেক বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছিল। সেই জল সামান্য কমেছে, তবে রবিবারেও পুরো জল নামেনি।
বেহালার গোটা নিকাশি ব্যবস্থাই নিয়ন্ত্রণ করত দু’টি খাল চড়িয়াল এবং বেগড়। মহেশতলা এলাকার মণি খালে গিয়ে মিশেছে চড়িয়াল। বেশ কয়েক বছর ধরে বাস্তবে বেগড় খালের আর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। চড়িয়াল খালের নাব্যতা কমে যাওয়া নিয়েও অভিযোগ উঠছিলই। তথৈবচ অবস্থা মণি খালের। এমন পরিস্থিতিতে নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি সাধনে কয়েক বছর ধরে কলকাতা এনভায়রনমেন্ট ইম্প্রুভমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগামের (কেইআইআইপি) কাজ চলছে সেখানে। তাতেই বেহালাবাসীর আশা ছিল, এ বারে জলের তলায় যাবে না বাড়িঘর। দু’দিনের বৃষ্টিতে তা ভুল প্রমাণ করে বিস্তীর্ণ বেহালা জলে ডুবল।
ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের কথায়, আগেও বেহালার নিকাশি নিয়ে কেইআইআইপি-র কাজ হয়েছে। তবুও কেন এই পরিস্থিতি? পুরসভা সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগে কেইআইআইপি-র কাজ হলেও ২০১৫ সালে কিছু ত্রুটি দেখা গিয়েছিল। যে কারণেই জমা জল নামতে পাঁচ-ছ’দিন সময় লেগে যেত। তা সারাতে এখনও কাজ চলছে।
একে বৃষ্টির জমা জল, সঙ্গে দোসর কেইআইআইপি-র কাজের জন্য রাখা বড় বড় পাইপ। যার জেরে দুর্বিষহ দিন যাপন করছেন বেহালাবাসী। নিকাশির কাজের বড় বড় পাইপগুলি চড়িয়াল খালে ফেলে রাখায় জল নিকাশির ব্যবস্থা প্রায় পুরো রুদ্ধ হয়ে রয়েছে। পাম্প চালিয়ে জল সরানোর কয়েক ঘণ্টা পরেই তা ফিরে আসছে বলে অভিযোগ।
বেহালা-ঠাকুরপুকুর এলাকার ১২৪, ১২৭, ১২৮, ১২৯, ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকাই রবিবার রাত পর্যন্ত জলে ডুবে। শখেরবাজার, মতিলাল গুপ্ত রোড, শকুন্তলা পার্ক, আর্দশনগর, গুলেপাড়া, শীল পাড়া রোড, পঞ্চাননতলা, বেচারাম চ্যাটার্জি রোড, শ্রীপল্লিতে এখনও হাঁটুজল। ঠাকুরপুকুরের ফকিরপাড়া এলাকার সব বাড়িতে ঢুকেছে জল। জমা জলের কারণে বেড়েছে মশা। শনিবার রাতে বেহালা ফ্লাইং ক্লাব এলাকায় পাম্প চালিয়ে জল সরানো শুরু করতেই তেড়ে আসেন মহেশতলা পুরসভার ১২, ১৩ এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। বেহালার ১৩০, ১৩১ এবং ১৩২ নম্বর ওয়ার্ডের জল মূলত মণি খাল দিয়ে যাওয়ার কথা। ওই খাল টইটুম্বর। খালের জল ছাপিয়ে মহেশতলা পুরসভার তিনটি ওর্য়াডকে বানভাসি করে দিচ্ছিল, তাই ওই পাম্প বন্ধ করে দেওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বেহালার তিনটি ওর্য়াডে জল ফের ঢোকে। কোথাও হাঁটুজল তো কোথাও কোমর ছুঁই ছুঁই।
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ বাড়িই বাসের অযোগ্য। অনেকেই আত্মীয়-পরিচিতদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। যাঁদের সে উপায় নেই, জলের মধ্যেই চলছে খাওয়া-ঘুম। ১২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু জায়গায় নৌকা চালাতে হয়েছে বলেও দাবি স্থানীয়দের। জলের তলায় রয়েছে ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের মুকুন্দপুর, দাসপাড়া, ভগৎ সিংহ কলোনি ও নয়াবাদ এলাকাও।