দমকলকর্মী স্নেহাশিস রায়। —ফাইল চিত্র।
দক্ষিণ দমদমের বাসিন্দা, দমকলকর্মী স্নেহাশিস রায়কে খুনের ঘটনার নেপথ্যে কি উঠে আসছে সম্পর্কের কারণে আক্রোশ? তদন্তকারীদের দাবি, মূল চক্রীকে জেরা করে তাঁরা এমনই ইঙ্গিত পেয়েছেন। যদিও সেই দাবি খতিয়ে দেখা হবে বলেই জানিয়েছে পুলিশ।
এই খুনের ঘটনায় রবিবার ভোরে আরও দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে লেক টাউন থানর পুলিশ। ধৃতদের নাম সাগর হালদার ও তন্ময় পাল। পুলিশ সূত্রের দাবি, খুনের মূল চক্রী সাগর। খুন করার জন্য সে-ই ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করেছিল। তন্ময়ের মাধ্যমে ভাড়া করা হয়েছিল খুনিদের। পুলিশের ওই সূত্রের আরও দাবি, ত্রিকোণ প্রেমের কারণেই স্নেহাশিস খুন হয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে স্নেহাশিস ও সাগরের স্ত্রীর ফোন কলের তালিকা দেখা হচ্ছে। তদন্ত প্রসঙ্গে আজ, সোমবার বিধাননগর কমিশনারেটের বিশদে জানানোর কথা।
পুলিশের দাবি, জেরায় সাগর জানিয়েছে, সে এবং স্নেহাশিস এক যুবকের সঙ্গে ব্যবসা করত। কিন্তু ওই যুবককে ভুল বুঝিয়ে স্নেহাশিস ক্রমশ সাগরকে বিভিন্ন কাজ থেকে সরিয়ে দিতে থাকেন। সাগর আরও দাবি করেছে, দমকলের চাকরিটি তারই পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ ওই যুবককে ভুল বুঝিয়ে স্নেহাশিস সেই চাকরি নিয়ে নেন। এমনকি, স্নেহাশিস এবং সাগরের মধ্যে গোলমাল চরমে ওঠে এক মহিলাকে কেন্দ্র করে। এর পরেই স্নেহাশিসকে খুনের ছক কষতে শুরু করে সাগর, এমনটাই তদন্তে জানা গিয়েছে। এ দিকে, গত বছর গোরাবাজারের দমকল কেন্দ্রের বাইরে স্নেহাশিসকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোয় তার হাত নেই বলে সাগর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে লেক টাউন থানা এলাকার চিনা মন্দিরের কাছে অজয়নগর খালপাড়ে নিজের ফ্ল্যাটের নীচে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন দমকলকর্মী স্নেহাশিস। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে ওই রাতেই পুলিশ আফরাজ আনসারি ও আয়ুষ শর্মা নামে দুই ভাড়াটে খুনিকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার ধরা হয় আকাশ মল্লিক নামে আর এক যুবককে। তদন্তে জানা যায়, খুনের আগে আকাশই দুষ্কৃতীদের চিনিয়ে দিয়েছিল স্নেহাশিসকে। এমনকি, স্নেহাশিসের গতিবিধির উপরে গত দেড়-দু’মাস ধরে নজর রেখে তাঁর যাতায়াতের রাস্তা-সহ অনেক কিছুরই স্কেচ করেছিল আকাশ।
তদন্তকারীরা জানান, জেরায় আকাশ জানিয়েছে, স্নেহাশিসকে খুনের ব্যাপারে তন্ময় তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। এর পরেই রবিবার পুলিশ প্রথমে তন্ময়কে গ্রেফতার করে। তার বাড়ি সোদপুরে। তন্ময়কে জেরা করে উঠে আসেমধ্যমগ্রামের বাসিন্দা সাগরের নাম। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে দু’জনকেই বাইরে থেকে ধরা হয়েছে। খুনের পরে সাগর কুলপিতে গা-ঢাকা দিয়েছিল।
তদন্তকারীরা প্রাথমিক ভাবে জেনেছেন, ব্যারাকপুরের একটি খুনের ঘটনাতেও সাগরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। পুলিশকে সে জানিয়েছে, ব্যবসার সূত্রে স্নেহাশিসের সঙ্গে তার পরিচয়। পরে তা পারিবারিক বৃত্তে ঢুকে পড়ে। সাগরের দাবি, তার স্ত্রীর সঙ্গে স্নেহাশিসের যোগাযোগ ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, সাগরের স্ত্রী ও স্নেহাশিসের ফোন কলের তালিকা দেখা হবে।