এই প্রবল গরমে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীদের জন্য কি অন্য কোনও ব্যবস্থা করা যায়? ফাইল ছবি।
তীব্র দহনে পুড়ছে শহর কলকাতা। পথে বেরিয়ে কাজ করতে হয় যাঁদের, তাঁদের জন্য নানা রকম সতর্কবার্তা দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সেই গোষ্ঠীতে রয়েছেন কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীরাও। ঝড়, জল, রোদ— পরিস্থিতি যেমনই হোক, তাঁদের পথে নেমেই কাজ করতে হয়। কিন্তু এই প্রবল গরমে তাঁদের জন্য কি অন্য কোনও ব্যবস্থা করা যায়? এই ভাবনা থেকেই কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের কনস্টেবল, হোমগার্ড ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের মতো নিচুতলার কর্মীদের কাজের সময় দু’ঘণ্টা কমাল লালবাজার। চলতি সপ্তাহ থেকেই এই নির্দেশিকা কার্যকর হয়েছে। কিন্তু নির্দেশিকা ঘিরে ক্ষোভ এবং আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে বাহিনীর একাংশে।
প্রশ্ন উঠেছে, দু’ঘণ্টা কম কাজ করানোর জন্য বাহিনীতে যত সংখ্যক কর্মী দরকার, তা কোথায়? ছ’ঘণ্টা কাজের পরে আদৌ ছুটি মিলবে তো? নির্দেশ শুধুমাত্র খাতায়-কলমেই থেকে যাবে না তো? ক্ষুব্ধ ট্র্যাফিক সার্জেন্টদের বড় অংশেরই প্রশ্ন, এই নির্দেশ তাঁদের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে না কেন? লালবাজারের কর্তাদের যদিও দাবি, করোনা-পর্ব বাদে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এবং ২০২২ সালে যা করা হয়েছিল, সেই পুরনো রীতি মেনেই এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। ট্র্যাফিক সার্জেন্টরা যে হেতু ঘুরে ঘুরে কাজ করেন, তাই তাঁদের কাজের সময় কমানোর কথা নির্দেশিকা থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। হোমগার্ড, কনস্টেবল বা সিভিক ভলান্টিয়ারেরা বরং এক জায়গায় বেশি ক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করেন। কিন্তু ট্র্যাফিক সার্জেন্টদের দাবি, এ বছর যেমন নজিরবিহীন গরম পড়েছে, তা মাথায় রেখে তাঁদেরও কাজের সময় কমানোর আওতায় এনে ব্যতিক্রমী কিছু ভাবা যেত।
কয়েক দিন আগেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের হাতে রোদচশমা, ওআরএসের প্যাকেট এবং জলের বোতল তুলে দিয়েছিলেন কলকাতার নগরপাল। তখনই পুলিশকর্তাদের তরফে জানানো হয়, রোদে ঠায় দাঁড়িয়ে কাজ করার প্রয়োজন নেই। মোড়ে মোড়ে থাকা কিয়স্ক বা ট্র্যাফিক বুথগুলিতে বসেই রাস্তায় চোখ রাখতে পারেন ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীরা। সংশ্লিষ্ট ট্র্যাফিক গার্ড থেকে সিসি ক্যামেরায় রাস্তায় নজরদারি বাড়ানোর কথাও বলা হয়। দুর্ঘটনা ঘটলে বা যানজটের পরিস্থিতি তৈরি হলে ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের পথে নেমে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কর্তব্যরত অবস্থায় চড়া রোদের মধ্যে হেলমেট পরার নিয়মও শিথিল করা হয়। এর পরেই কাজের সময় কমানোর নির্দেশিকা জারি করা হয়। তাতেই ট্র্যাফিক কনস্টেবলদের ক্রসবেল্ট এবং চামড়ার অ্যাঙ্কলেট ব্যবহার করতে বারণ করা হয়েছে। কারণ, পুলিশকর্তাদের মতে, গরমে সেগুলি পরে কাজ করতে গিয়ে ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
পূর্ব কলকাতার একটি ট্র্যাফিক গার্ডের এক পুলিশ আধিকারিক বললেন, ‘‘নির্দেশিকা খুবই ভাল। কিন্তু তা পালন করা হবে কী ভাবে, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। বাহিনীতে কর্মীর সংখ্যা এতই কম যে, নিচুতলার ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের বহু কাজ সামলাতে হয়। সেই কারণে খাতায়-কলমে আট ঘণ্টার ডিউটি হলেও অনেকেই ১০-১২ ঘণ্টার আগে ছুটি পান না। দু’ঘণ্টা কম কাজ করিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া অলীক ব্যাপার।’’ ইএম বাইপাস লাগোয়া একটি ট্র্যাফিক গার্ডের এক কনস্টেবল আবার বললেন, ‘‘ওই সব নির্দেশিকা অনেক দেখা আছে। গরমে কোনও বারই কম কাজ করে ছুটি মেলে না। বরং বাবুরা বিশ্রাম নেন বলে বেশি কাজ করতে হয়। যে হেতু বাবুদের রিপোর্টের উপরে আমাদের চাকরির ভাল-মন্দ নির্ভর করে, তাই প্রতিবাদও করা যায় না।’’
কলকাতা পুলিশের উপ নগরপাল (ট্র্যাফিক) সূর্যপ্রতাপ যাদব বলেন, ‘‘রীতি মেনেই কাজের সময় কমানোর এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ট্র্যাফিক গার্ডের ওসিদেরই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে। গাফিলতির ব্যাপার থাকলে নিশ্চয়ই দেখা হবে।’’