এ বার ‘বড় লড়াই’!
বৈঠকে এমনই বার্তা দিলেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়।
নাকতলায় কমবেশি ৪০ কাঠা জমিকে কেন্দ্র করে জমির মালিকের সঙ্গে মামলা চলছে কেএমডিএ এবং কেএমডব্লিউএসএ-র। সোমবার পুরসভায় নাকতলার ওই জমি নিয়ে আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে জরুরি বৈঠক হয়। তাতে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, জনস্বার্থে ওই জমি পুরসভার প্রয়োজন। এর জন্য আইন মেনে যা করার করতে হবে। কাজেই সরকারি আইনজীবীকে বড় লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
পুরসভা সূত্রে খবর, এ দিনের বৈঠকে নাকতলায় ২৫৩সি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোডের জমি সমস্যা মেটাতে এ কথা বলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। বৈঠকে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মূলত এলাকার (টালিগঞ্জের) বিধায়ক হিসেবে তাঁকে ওই বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। ছিলেন কলকাতার পুর কমিশনার খলিল আহমেদ, কেএমডিএ-র চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার সুরেন্দ্র গুপ্ত, গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) অভ্রতোষ মজুমদার, পুরসভার আইনজীবী তথা প্রাক্তন জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ কেএমডিএ, কেএমডব্লিউএসএ এবং পুরসভার অফিসারেরা। প্রয়োজনে ওই মামলা যে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে, তেমন ইঙ্গিতও মিলেছে এ দিনের বৈঠকে।
পুরসভা সূত্রে খবর, গঙ্গা অ্যাকশন পরিকল্পনার কথা ভেবে টালি নালা সংস্কারের প্রয়োজনে সত্তরের দশকে ওই জমি অধিগ্রহণের জন্য নেয় কেএমডিএ। কিন্তু দীর্ঘ ওই সময়েও অধিগ্রহণ পর্ব সম্পন্ন করা যায়নি। ক্ষতিপূরণ না পেয়ে ২০১৩ সালে মামলা করেন জমির মালিক লীনা দত্ত। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই জমি পুরসভাকে হস্তান্তরিত করে কেএমডব্লিউএসএ। এ দিন সেই প্রসঙ্গও ওঠে পুর-বৈঠকে। পুরসভার এক কর্তা জানান, হস্তান্তরের সময় কেন তা পুরসভাকে জানানো হয়নি তা নিয়ে কেএমডব্লিউএসএ-কে দোষারোপ করেন মেয়র।
সেই মামলায় গত ৯ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, ওই জমি থেকে দখলদার উচ্ছেদ করতে হবে। এর জন্য দিন স্থির হয় ১৮ ডিসেম্বর। ওই জমির একটা অংশে ক্লাব ও বিয়েবাড়ি ‘জবরদখল’ করে থাকায় ইতিমধ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আদালত। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন ও পুলিশ সেই কাজ করতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারকে ভর্ৎসনাও করেছে হাইকোর্ট। আগামী ১৪ জানুয়ারি ওই মামলা ফের হাইকোর্টে উঠবে। হাইকোর্টে কী জবাব দেওয়া হবে, তার জন্য শনিবার এক বৈঠকে বসেছিলেন মেয়র এবং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এ দিনও ফের বৈঠক বসে পুরসভায়।
বৈঠকে ঠিক হয়েছে, সত্তরের দশকের পুরনো কাগজপত্র-সহ সব কিছু নিয়ে আজ, মঙ্গলবার রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। ফাইলপত্র পাঠানো হবে রাজ্যর আইনমন্ত্রীর কাছেও।
পুরসভা সূত্রের খবর, নাকতলার ওই জমি টালিগঞ্জ বিধানসভা এলাকায়। সে কারণেই টালিগঞ্জের বিধায়ক তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে এ দিন বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। যদিও বৈঠকের বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। আর মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় শুধু বলেছেন, ‘‘১৪ জানুয়ারি আদালতে কী জবাব দেওয়া হবে তার জন্য প্রস্তুতি চলছে।’’
এ দিনও মেয়রের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, জমি কি কিনে নেবেন? শোভনবাবুর জবাব, ‘‘কোনও মন্তব্য করব না।’’
তবে টালিনালা সংস্কারের প্রয়োজনে ওখানে যে জমি দরকার, তা জানাতে ভোলেননি তিনি।