বাবা-মায়ের সঙ্গে ন’মাসের সেই শিশু। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
সাত দিন বয়সে ধরা পড়েছিল, শিশুটির হৃদ্যন্ত্রে ছিদ্র আছে। কিন্তু দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ায় আটকে যায় তার চিকিৎসা। চোখের সামনে সন্তানকে ধীরে ধীরে নেতিয়ে পড়তে দেখছিলেন ডায়মন্ড হারবার-সরিষা মার্কেট রুটের টোটোচালক রাজিবুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী সালেহা বিবি। নীল হয়ে যাওয়া শিশুটির শ্বাসকষ্ট ছিল। কিছু খেলেই বমি করে দিত। রাত-দিন শুধুই কেঁদে যেত। সাহসে ভর করেই গত অগস্টে রাজিবুল ন’মাসের রুবেল রাজ ফকিরকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসার পরে এখন সুস্থ শিশুটি।
এপ্রিলের এক রাতে বুকের অসহ্য ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন চুঁচুড়ার অমিতাভ সরকার। দুটো হাত ভারী হয়ে যাচ্ছিল। হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছিল। ২৫ বছর ধরে টাইপ টু ডায়াবিটিসের রোগী অমিতাভের পরিবার দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করান। অ্যাঞ্জিয়োগ্রাম করে দেখা যায়, তাঁর একটি ধমনীতে ৯৫ শতাংশ ব্লকেজ আছে। স্টেন্ট বসিয়ে এখন সুস্থ তিনি।
হাওড়ার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী উজ্জ্বল দাস ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি, মাঝেমধ্যে হওয়া বুকের ব্যথাটা আসলে গ্যাস-অম্বলের কারণে নয়। তাঁর চিকিৎসক সব্যসাচী পাল জানাচ্ছেন, উজ্জ্বলের রোগের নাম ‘অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফাকশন’, সোজা ভাষায় যার নাম হার্ট অ্যাটাক। শরীরের তিনটি ধমনীর একটি সম্পূর্ণ ব্লকেজ হলে সেই অবস্থাকে এই রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বুকে যন্ত্রণা শুরুর ১২ ঘণ্টার মধ্যে ব্লকেজ সরানো গেলে রোগী চিকিৎসায় সাড়া দেন। উজ্জ্বলের ক্ষেত্রে ছ’ঘণ্টার মধ্যে সেই প্রক্রিয়া হয়েছিল। সুস্থ উজ্জ্বল বর্তমানে কাজে ফিরতে পেরেছেন।
কোভিড-আতঙ্কের মধ্যেই রুবেল, অমিতাভ, উজ্জ্বলের মতো হার্টের চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা তাদের বেশ কিছু রোগীকে নিয়ে মঙ্গলবার, ‘ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে’ পালন করল বি এম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টার। অনুষ্ঠানে ছিলেন হৃদ্রোগ চিকিৎসক অনিল মিশ্র, অঞ্জন সিয়োটিয়া, ধীমান কাহালি, তরুণ প্রহরাজ, শুভেন্দু মণ্ডল, শুভ দত্ত, সব্যসাচী পাল এবং হৃদ্রোগ শল্য চিকিৎসক মনোজ দাগা ও রতন দাস।
কোভিড সংক্রমণের আতঙ্কে হৃদ্রোগের মতো জরুরি চিকিৎসার অবহেলা কতটা প্রাণঘাতী হতে পারে, আলোচনায় উঠে এসেছিল সেই প্রসঙ্গ। চিকিৎসকদের বক্তব্য, কোভিড-বিধি মেনে সুরক্ষা-কবচ পরেই চিকিৎসা করা হয়েছে। ভয়কে জয় করে যাঁরা সে দিন এসেছিলেন, তাঁরা আজ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গিয়েছেন।