অসহায়: আটকে পড়া সেই পথ-কুকুর। নিজস্ব চিত্র
বিমানবন্দরের একতলার ছাদে সে উঠে বসেছিল দিন দুয়েক আগে। শুক্রবারে পথচলতি এক প্রাতর্ভ্রমণকারীর নজরে আসে। দেখেন, নেড়া ছাদের একেবারে কোনায় এসে কুঁই কুঁই শব্দ করে লেজ নেড়ে সে নামার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
কলকাতা বিমানবন্দরের পুরনো যে আন্তর্জাতিক টার্মিনাল সেটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। একতলা বিশাল লম্বা বাড়ির নেড়া ছাদটাও বিশাল। সাদা-কালো ছোপ ছোপের পথ-কুকুর যে কী করে সেই ছাদে উঠল তা কেউই বুঝতে পারছেন না। তবে শনিবার সারা দিন ধরে বিস্তর চেষ্টা করে, দমকলের সাহায্য নিয়ে রাতে তাকে নামিয়ে আনা গিয়েছে।
যদিও উদ্ধারকাজটা খুব সহজ ছিল না। অনেকেই মনে করছেন, ছাদে উঠে যে কেউ তাকে ধরতে গেলে কুকুরটি স্বাভাবিক আচরণ না-ও করতে পারত। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিমানবন্দর চত্বর লাগোয়া এক মহিলার কথা। যাঁকে বুড়ি নামেই সকলে চেনেন। ঝুপড়িতে থাকেন। বিমানবন্দর চত্বরে তাঁকে ভিক্ষা করতেও দেখেছেন অনেকে। জানা যায়, কাউকে কিছু না বলে ছাদে উঠে বসা কুকুরটি আসলে বুড়ির সঙ্গে থাকে, তাঁর কাছেই খায়।
বুড়ির ছেলে রয়েছে বছর দশেকের। পুলিশের সাহায্য নিয়ে তাকে নিয়ে আসা হয়। সে-ই সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে ছাদে উঠে যায়। চেনা পরিচিত মুখ দেখে কুকুরটি তো বেজায় খুশি। আরও এক ব্যক্তির সাহায্য নিয়ে কার্যত চ্যাংদোলা করে সেটিকে শনিবার রাত ন`টা নাগাদ নীচে নামিয়ে আনা হয়।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, শুক্রবার প্রথম ছাদের উপরে নজরে আসে কুকুরটি। আশঙ্কা তৈরি হয়, খাবার ও জল না পেয়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। বিশাল ছাদের উপরে একটি পরিত্যক্ত ঘরও রয়েছে। শনিবার সকালে এক জন ছাদে উঠে খুঁজে পাননি তাকে। মনে করা হচ্ছে, রোদ জল থেকে বাঁচতে সেই সময়ে কুকুরটি লুকিয়ে বসেছিল ওই পরিত্যক্ত ঘরেই। দুপুরে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফের এক জওয়ান আবার ছাদের ধারে দেখতে পান তাকে। বিমানবন্দরে যে ম্যানেজার ডিউটিতে ছিলেন তিনি উদ্যোগী হয়ে কিছু খাবার ছুড়ে দেন ছাদে।
রাতে উদ্ধারের সময়ে দেখা যায় অভুক্ত কুকুরটি সেই খাবার খেয়েছে। কিন্তু, জল ছিল না উপরে। কুকুরটিকে উদ্ধার করতে দমকলে খবর দেন ম্যানেজার। বিমানবন্দরের নিজস্ব অত্যাধুনিক দমকল বাহিনী রয়েছে। কিন্তু, একটা বড়সড় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো কুকুরকে অচেনা কোলে তুলে নামিয়ে আনা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। তখনই জানা যায় বুড়ির কথা। ডেকে নেওয়া হয় বুড়ির ছেলেকে। উদ্ধার হয় তাঁর পোষ্যটি।