ফাইল চিত্র।
কথায় আছে, ‘একা রামে রক্ষে নেই, সুগ্রীব দোসর!’
অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ের মধ্যে পৌষের শেষ লগ্নে হয়ে যাওয়া আচমকা বৃষ্টি এখন সেই পরিস্থিতিই তৈরি করে দিচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের ব্যাখ্যা, এমনিতেই অধিকাংশ লোকজন করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এ বার জ্বর, সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ দেখা দিলেও সেটিকে বৃষ্টিতে ঠান্ডা লেগেছে বলেই দাবি করবেন অনেকে। চিকিৎসকদের কথায়, “এর ফলে প্রকৃত করোনা আক্রান্তদের চিহ্নিত করাই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। তাই রোগের কারণ সম্পর্কে নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে, যে কোনও ধরনের ন্যূনতম উপসর্গ দেখা দিলেই করোনা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, করোনার উপসর্গ এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনের জন্য ঠান্ডা লেগে যে সব সমস্যা দেখা দেয়, দুইয়ের মধ্যে যে বিশাল কিছু হেরফের আছে তেমন নয়। আর সে কারণেই আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং করোনার কারণকে গুলিয়ে আরও পরীক্ষা করাতে না চাওয়ার প্রভূত আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এসএসকেএম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষ জানাচ্ছেন, ঠান্ডা লাগার কারণে যে ভাইরাস দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হন সেগুলি এক ধরনের ‘আরএনএ’ ভাইরাস। আবার কোভিডও সেই ধরনের ভাইরাস। দু’টির উপসর্গও অনেকটা এক। সৌমিত্রবাবুর কথায়, “করোনায় আক্রান্ত হয়ে জ্বরের চেয়েও বেশি উপসর্গ দেখা দিচ্ছে আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাকে, অর্থাৎ মুখ-নাক-গলায়। গলা খুশখুশ, নাক বন্ধ, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি— এই সব উপসর্গ দিয়েই ৯৫ শতাংশ মানুষের রোগ শুরু হচ্ছে। সুতরাং ঠান্ডা লাগার সমস্যা থেকে এগুলিকে আলাদা করা মুশকিল। তাই বুঝতে গেলে পরীক্ষা করতেই হবে।’’ তিনি আরও সতর্ক করছেন, করোনার সূদূরপ্রসারী প্রভাব কিন্তু রয়েছেই। এখন সংক্রমণ তাড়াতাড়ি সেরে গেলেও এক শতাংশ হলেও খারাপের আশঙ্কা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সৌমিত্রবাবু-সহ অন্য চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, করোনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারলে পরিবারের বয়স্ক সদস্যকেও ওই এক শতাংশ ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়।
কিন্তু আচমকা বৃষ্টিতে মাস্ক ভিজে গেলে তা দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে অনেকেই রাজি হবেন না, সেটাই স্বাভাবিক। তার ফলেও ঝুঁকি বাড়ছে বলে মত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের। তাঁর কথায়, “মাস্ক ভিজে গেলে সেটা কেউ পরতে চাইবেন না। অগত্যা মাস্ক ছাড়াই ঘুরবেন। তার উপরে বৃষ্টিতে ভিজে শরীরের লড়াই করার ক্ষমতা কিছুটা দুর্বল তো হয়ই। স্বাভাবিক ভাবেই এই সব কারণে করোনার প্রাদুর্ভাব কিছুটা বাড়তে পারে।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, ঠান্ডা লেগে তৈরি হওয়া উপসর্গ এবং করোনার মধ্যে সামান্য হলেও কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন, ঠান্ডার কারণে কাশি, গলায় কফ, হাঁচি, নাক দিয়ে জল পড়ার মতো সমস্যা প্রথমে শুরু হবে। তার সঙ্গে দুর্বলতা, শরীরে যন্ত্রণা, জ্বর যুক্ত হলে বুঝতে হবে সেটি করোনার কারণ। কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে কি এত সূক্ষ্ম পার্থক্য বোঝা সম্ভব? “বেশির ভাগ মানুষের পক্ষে হয়তো সম্ভব নয়। সে জন্যই পরীক্ষার উপরে এত জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মানুষ শুনছেন কোথায়?” মন্তব্য অরুণাংশুবাবুর।
শীতের এই অসময়ের বৃষ্টিতে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। আর সেই প্রবণতা থেকেই করোনা পরীক্ষা না করানোর মানসিকতা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস। তিনি জানাচ্ছেন, আচমকা আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে মানুষ অন্য ভাইরাস বা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হতে পারেন। আর ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং কোভিড একসঙ্গে হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অরিন্দমবাবুর কথায়, “এটা নতুন কিছু নয়। দু’টি ভাইরাস একসঙ্গে আক্রমণ করতেই পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং কোভিড একসঙ্গে হওয়ার প্রমাণ ইজ়রায়েলে মিলেছে। সেটা এই দেশে হবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই। তাই প্রাথমিক ভাবে আগে করোনা পরীক্ষা করানো জরুরি।’’