Fake Doctors

চিকিৎসকদের ভুয়ো পরিচয়ে প্রতারণার জাল অনলাইনে

মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় বললেন, “এই ধরনের সংস্থা আমাকেও ধরেছিল। দরকার নেই বলে দেওয়ার পরেও এক দিন শুনলাম, যে সময়ে আমি কখনও রোগী দেখি না, তেমন একটি সময়ে আমার বুকিং নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২০ ০২:৩৯
Share:

—প্রতীকী ছবি।

দু’জনেরই এক নাম। পদবিও এক। পদবির ইংরেজি বানান দু’জনে দু’রকম লেখেন। চিকিৎসক হিসেবে দু’জনের পার্থক্য অবশ্য বিস্তর। এক জন ইএম বাইপাসের নামী হাসপাতালের চিকিৎসক। অন্য জন বসেন বৈঠকখানা রোডের এক ওষুধের দোকান সংলগ্ন চেম্বারে। এক জন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি, হেপাটোলজির বিশেষজ্ঞ হিসেবে দীর্ঘদিন বিদেশে কাটিয়েছেন। অন্য জন নিজের দেওয়া ওষুধের কম্পোজিশন নিজেই বলতে পারেন না!

Advertisement

তবু ইন্টারনেট থেকে পাওয়া তাঁর নম্বরে কেউ ফোন করে বাইপাসের হাসপাতালের চিকিৎসকের খোঁজ করলে তিনি নিজেকে সেই চিকিৎসক হিসেবেই পরিচয় দেন বলে অভিযোগ। এমনই এক রোগীর পরিবারের দাবি, ফোন করায় ওই চিকিৎসক বলেছেন, “হ্যাঁ, আমি ওই চিকিৎসকই বলছি। ওই হাসপাতালের পাশাপাশি বৈঠকখানা রোডের চেম্বারে বসছি। দেখাতে হলে এখানেই আসতে হবে!” সেখানে গিয়ে রোগীর পরিবার দেখে, অত বড় চিকিৎসক নিজেই রোগী দেখছেন, নিজেই রোগীর শারীরিক পরীক্ষা করাচ্ছেন, এমনকি পাশের ওষুধের দোকান থেকে নিজেই ওষুধ বার করে দিচ্ছেন এবং নিজেই বিল করছেন! রোগীর পরিজনদের দাবি, তিনি এমনই ওষুধ দিয়েছিলেন, যা নাকি বাইরে পাওয়া যায় না! তাঁর দোকান থেকেই কিনতে হবে বলে জানানো হয়। সব মিলিয়ে বিল হয় ৫১৯০ টাকা! পরে তাঁদের ভুল ভাঙে আসল চিকিৎসকের কাছে গিয়ে। বাইপাসের হাসপাতালের ওই চিকিৎসক জানান, এই কাণ্ড বহু দিন ধরেই চলছে। সমস্যায় পড়ছেন মূলত বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসা রোগীরা!

শহরের চিকিৎসকদের বড় অংশই জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটেছে। করোনার জেরে এই মুহূর্তে যে কোনও হাসপাতালে বা চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসকের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া যাচ্ছে না। তাই জরুরি প্রয়োজনে অনেকেই ডাক্তার খুঁজছেন ইন্টারনেটে। অনলাইনে ডাক্তার খোঁজার চেষ্টা যত বাড়ছে, ততই প্রবল হচ্ছে ভুয়ো চিকিৎসকদের খপ্পরে পড়ার ঝুঁকি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বুকিংয়ের টাকা আগাম দিয়ে প্রতারিত হতে হচ্ছে।

Advertisement

বক্ষরোগ চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগীকেই খুঁজতে গিয়ে যেমন বিপদে পড়েছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি জানান, ইন্টারনেটে পাওয়া একটি নম্বরে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে প্রতি বারই এক ব্যক্তি ফোন ধরে জানান, ভুল নম্বরে ফোন করা হয়েছে। শেষে ওই ব্যক্তি বলেন, “কেউ কারসাজি করে রেখেছে। গত কয়েক বছরে অনির্বাণ নিয়োগীর নামে ফোন পেয়ে পেয়ে শেষে নিজেই তাঁর নম্বরটি জোগাড় করে রেখেছি।”

অনির্বাণবাবু বলেন, “এমন সমস্যা অনেকেরই হচ্ছে। বেশ কয়েকটি সংস্থা ফোন করে বলেছে, মাসিক কিছু টাকা দিলে নাকি গুগলে চিকিৎসক তালিকায় আমার নাম প্রথমে দেখানোর ব্যবস্থা করে দেবে। এমনিতেই রোগীর প্রবল চাপ, নাম প্রথমে আনার চাপ আর নিতে চাইনি।”

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারও বললেন, “শুধু নাম কেন, চিকিৎসার বিষয়কে ধরে ধরে মেটা কি-ওয়ার্ডস বানিয়ে সার্চ ইঞ্জিনে প্রথমে এনে দেওয়ার কথা বলে বহু সংস্থা।”

মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় বললেন, “এই ধরনের সংস্থা আমাকেও ধরেছিল। দরকার নেই বলে দেওয়ার পরেও এক দিন শুনলাম, যে সময়ে আমি কখনও রোগী দেখি না, তেমন একটি সময়ে আমার বুকিং নেওয়া হয়েছে। এমনকি, অনলাইনে আমার নামের প্রোফাইল বানিয়ে ভুল তথ্যও দেওয়া হয়েছে।”

সাইবার বিশেষজ্ঞদের বড় অংশেরই দাবি, লকডাউনের পর থেকেই বেড়েছে এই ধরনের প্রতারণা। ভুয়ো অক্সিমিটার বা ওষুধ বিক্রি থেকে অনলাইন পরামর্শ দেওয়ার নামে ভুয়ো প্রোফাইলও তৈরি করা হচ্ছে একের পর এক।

চিকিৎসক কুণাল সরকার যদিও মনে করেন, “অনলাইনে একটি লুচির দোকান খুঁজতে গেলে অনেক লুচি প্রস্তুতকারী সংস্থার নাম চলে আসবে। গ্রাহকের উচিত, খোঁজ নিয়ে আসল সংস্থাটি খুঁজে বার করা। তবে জরুরি পরিস্থিতিতে সময় হাতে না থাকায় সমস্যা হয়। তবু সাবধান হওয়া ছাড়া উপায় নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement