Fever

Children Fever: আতঙ্ক নয়, শিশুদের জ্বরে সতর্কতাই নিদান ডাক্তারদের

সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারেও বাড়ছে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৫৫
Share:

পুজোর মরসুমে বাড়ছে শিশুদের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। ফাইল চিত্র।

অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা এখনও যায়নি। তার মধ্যেই পুজোর মরসুমে বাড়ছে শিশুদের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। কয়েক জনের অবস্থা এতটাই সঙ্কটজনক হচ্ছে যে, তাদের ভেন্টিলেশনে পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। আর তাতেই রাজ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর রয়েছে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।

Advertisement

স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কথা ভেবে রাজ্যে সরকারি স্তরে চিকিৎসা-পরিকাঠামো বাড়ানো হয়েছে। ৫২টি পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর, ৫৫টি নিওনেটাল ভেন্টিলেটর এবং শিশুদের চিকিৎসায় ৪০০টি ভেন্টিলেটর রয়েছে বিভিন্ন ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে। শিশু-রোগ চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত সকলের ভেন্টিলেটর লাগছে না। অনেক ক্ষেত্রেই নেবুলাইজ়ার দিয়ে পরিস্থিতি সামলানো হচ্ছে। কিন্তু যাদের ফুসফুসে নিউমোনিয়া জাঁকিয়ে বসছে, তাদের কয়েক জনকে ভেন্টিলেশনে দিতে হচ্ছে। দেরিতে চিকিৎসা শুরু হওয়ায় কিছু শিশুকে হারাতে হচ্ছে।’’

তবে অযথা আতঙ্কিত না হয়ে বড়দের বাড়তি সতর্ক হতেই বলছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত বড়দের থেকে শিশুরা সহজেই সংক্রমিত হতে পারে। জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, বাড়িতে ভাইরাসজনিত উপসর্গে ভোগার ইতিহাস রয়েছে।’’ পাশাপাশি, পুরনো প্রেসক্রিপশন দেখে প্রথম কয়েক দিন ওষুধ খাওয়ানোর প্রবণতা বন্ধ করারও পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

খেয়াল রাখবেন

• টানা দু’-তিন দিন জ্বর

• শ্বাস নেওয়ার সময়ে নাকের পাটা ফুলে ওঠা এবং পাঁজরের অংশ ভিতরে ঢুকে যাওয়া

• বুকের দ্রুত ওঠানামা

• স্বাভাবিক খাওয়া কমে যাওয়া

• নেতিয়ে পড়া

• দিনে পাঁচ বারের কম প্রস্রাব হওয়া

(এই সব উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসককে জানান। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে)

বাড়িতে করণীয়

• ভাইরাসজনিত উপসর্গ থাকলে শিশুদের থেকে দূরে থাকুন

• সুষম খাবার, পর্যাপ্ত জল খাওয়াতে হবে

• নাক বন্ধ হয়ে শ্বাস নিতে সমস্যা হলে ‘ন্যাজ়াল ড্রপ’ দিতে হবে

• এক-দু’দিনের বেশি জ্বর থাকলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

• পুরনো প্রেসক্রিপশন দেখে অ্যান্টিবায়োটিক কখনওই নয়

উত্তরবঙ্গ ছাড়িয়ে জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে কলকাতাতেও। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারেও বাড়ছে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা। হাসপাতালে ভর্তি, বিশেষত সঙ্কটজনক শিশু এবং যাদের মৃত্যু হচ্ছে, সেই সংক্রান্ত বিষয়ে পর্যবেক্ষণের জন্য রাজ্য স্তরে কমিটি গড়েছে স্বাস্থ্য দফতর। তাতে রয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের শিশু-রোগ চিকিৎসক মিহির সরকার, দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী, কমিউনিটি মেডিসিনের তাঞ্জিব এইচ মৌলিক, বি সি রায় শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক গোবিন্দ মণ্ডল, আর জি করের কমিউনিটি মেডিসিনের চিকিৎসক রাজেশ দে এবং স্বাস্থ্য দফতরের দুই কর্তা, রাঘবেশ মজুমদার ও অঙ্কুর দাশগুপ্ত।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ছ’মাস থেকে দু’বছর পর্যন্ত বয়সি শিশুরাই বেশি এই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। তার উপরে দশ বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। দু’টি ক্ষেত্রেই বড় অংশ ‘রেসপিরেটরি সেনসিটায়াল ভাইরাস’ (আরএসভি)-এ আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়াও রয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা, সোয়াইন ফ্লু, অ্যাডিনোভাইরাস, মেটানিমো ভাইরাস। বাড়তি যুক্ত হচ্ছে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়াও।

আচমকা এমন জ্বরের বাড়বাড়ন্ত কেন? চিকিৎসক দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘প্রতি বছরই আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়ে জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। কিন্তু এ বছর টানা বৃষ্টির ফলে ভাইরাস বহু দিন ধরে থাকায় সমস্যা বেশি হচ্ছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘শিশু-মৃত্যুর কারণ শুধু জ্বর নয়। সময়ের আগে জন্ম হওয়া, ওজন কম থাকা, অপুষ্টি-সহ বিভিন্ন সমস্যাও রয়েছে।’’ আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে বড়রা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলেও, অল্প সর্দি-কাশিতে তা আটকে থাকছে। কিন্তু সেই ড্রপলেট থেকেও আরএস ভাইরাস মারাত্মক ভাবে ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন শিশু-রোগ চিকিৎসক আব্দুল হাবিব মণ্ডল।

তাঁর কথায়, ‘‘বড়দের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, তাঁদের তুলনায় শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম। তাই শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। একেবারে ছোট বাচ্চাদের থাকার ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে শ্বাস নেওয়ার সময়ে গরম হাওয়া ঢুকে বুকের কফ অনেকটা পাতলা করে দেয়।’’ আর জ্বর হলে প্রথমেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলছেন ‘ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স’-এর জাতীয় স্তরের সহ-সভাপতি তথা চিকিৎসক অতনু ভদ্র। তাঁর কথায়, ‘‘ভাইরাসজনিত উপসর্গ থাকলে বড়দের আলাদা থাকার কথা বলা হলেও, অনেক সময়ে হয়তো তা সম্ভব হয় না। তা-ও যতটা সম্ভব বিধি মানা প্রয়োজন। গত দেড় বছরে করোনার কারণে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রবণতা কমেছে। ফলে শিশুর জ্বর হলে পরিজনেরা পুরনো প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ খাওয়াতে শুরু করছেন। এখানে মনে রাখতে হবে, ভাইরাসঘটিত জ্বরে কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের কোনও ভূমিকা নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement