হাসপাতালে ভর্তির পরে কয়েক দিন কেটে গেলেও রোগী রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাচ্ছেন না। আবার সংক্রমণের জেরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে মাস চারেকের শিশু হাসপাতালে পৌঁছলেও ভর্তি না নিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট, বিশেষ বিভাগ, প্যাথলজি থাকলেও হাসপাতালে নেই চিকিৎসক! তাই ধুঁকছে সংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য তৈরি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল।
ওই হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস ধরে অর্ধেকেরও কম সংখ্যক চিকিৎসক এবং নার্স নিয়ে কাজ চলছে। শিক্ষক-চিকিৎসক হিসেবে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ২২ হলেও বর্তমানে রয়েছেন ৫ জন। ২৮৬ জন নার্সের অনুমোদন থাকলেও কাজ করছেন ১১০ জন। মেডিক্যাল অফিসারের সংখ্যা ১৫। যদিও অনুমোদিত পদ ৩১টি। এমনকি, এই হাসপাতালে কোনও রেডিয়োলজিস্ট নেই। স্নাতকোত্তর ট্রেনি দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে। ফলে, ইসিজি, এক্স-রে করার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
হাসপাতালের এক কর্তা অবশ্য জানান, স্বাস্থ্য ভবনে বারবার আবেদন করলেও কোনও সুরাহা হয়নি। ওই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক উচ্চতর কোর্স করে অন্য হাসপাতালে হৃদ্রোগ চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেবেন শীঘ্রই। ফলে, সমস্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৬৬০টি। অগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়লে শয্যা সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি হন। এ ছাড়াও বছরভর ডায়রিয়া, জলাতঙ্কের মতো সমস্যা নিয়ে রোগীর চাপ চলতেই থাকে।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় রাজ্যের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। ডায়রিয়া, জলাতঙ্কের পাশাপাশি ডেঙ্গি, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু-র মতো রোগেরও চিকিৎসা হয় এখানে। শিশুদের সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য আলাদা পরিকাঠামোও তৈরি হলেও হাসপাতালে কোনও শিশুরোগ চিকিৎসক নেই বলে এক কর্তা জানান। ফলে, শিশুদের চিকিৎসা করেন মেডিসিনের চিকিৎসকেরাই। হাসপাতালের এক কর্তা জানান, পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কোনও শিশুর অবস্থা জটিল হলে অন্য হাসপাতালে পাঠাতে হয়।
রোগীর সংখ্যা ও রোগগত বৈচিত্রের কারণে পঠনপাঠন ও গবেষণার উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান এই হাসপাতাল। স্বাস্থ্য ভবনের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, আইডি হাসপাতালে সংক্রামক রোগের স্নাতকোত্তর পঠনপাঠন চালু করার বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে আলোচনা হলেও লাভ হয়নি। কারণ, পঠনপাঠন চালু হলেই হাসপাতালটি মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-এর আওতায় আসবে। এমসিআই-এর আওতায় এলে শিক্ষক-চিকিৎসকের সংখ্যায় ১৫ শতাংশের বেশি ঘাটতি থাকা কোনও ভাবেই চলবে না।
তবে চিকিৎসক-নার্স ঘাটতি প্রসঙ্গে ওই হাসপাতালের অধ্যক্ষ অণিমা হালদার বলেন, ‘‘এটি হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। স্বাস্থ্য ভবনে সে কথা জানানো হয়েছে।’’