প্রতীকী ছবি
প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়া থাকলেও করোনা-বিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে কোনও রকম শৈথিল্য দেখানো চলবে না। অন্যথায় নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনা হবে। এই সতর্কবার্তা বার বার দিচ্ছেন চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে যাঁরা ইতিমধ্যেই প্রতিষেধকের একটি বা দু’টি ডোজ় পেয়েছেন, তাঁদের অনেকেই সাম্প্রতিক সময়ে ফের সংক্রমিত হয়েছেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও করোনা-বিধি মেনে না চললে কেউ ফের সংক্রমিত হতে পারেন। পুরসভার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রতিষেধক নেওয়ার পরে যদি কেউ ভাবেন মাস্ক ছাড়া নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াবেন, তা হলে তিনি নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবেন। কারণ, প্রতিষেধক নেওয়ার অর্থ এই নয় যে, ওই ব্যক্তি দ্বিতীয় বার সংক্রমিত হবেন না। পাশাপাশি তাঁর পরিবারে থাকা শিশু, বয়স্ক নাগরিক বা কোমর্বিডিটি থাকা কারও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, অগস্টের মাঝামাঝি শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮০-র মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। কিন্তু চলতি মাসের শুরুতে সেটা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। গত শুক্রবার কলকাতা পুর এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৩৭। পরের দিন সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪৫। রবিবার সংক্রমিত হয়েছেন ১৪৬ জন। সোমবার ও মঙ্গলবার আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৯৭ ও ১০৫-এ।
পরিসংখ্যানের লেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় উদ্বেগে পুর স্বাস্থ্য দফতর। পুরসভার এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘জুলাইয়ে যেখানে দিনপিছু করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪০-৫০ এর মধ্যে ছিল, মাত্র দু’মাস পরেই সেটা ১০০ ছাড়িয়ে গেল। এটা তো অবশ্যই চিন্তার। নাগরিকদের কাছে আমাদের একটাই অনুরোধ, বাড়ির বাইরে মাস্ক ছাড়া বেরোবেন না। কোথাও অযথা ভিড় করবেন না।’’
যোধপুর পার্কের বাসিন্দা এক চিকিৎসক-দম্পতির পরিবারের সাত জন সদস্যের মধ্যে এক জন ছাড়া বাকিরা আক্রান্ত। ওই পরিবারের এক সদস্য, চিকিৎসক ববিতা বসু বলেন, ‘‘আমি ছাড়া পরিবারের সকলেই ফের কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের এক জনের ছাড়া বাকি সকলেই প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় পেয়ে গিয়েছেন। আমার শ্বশুর-শাশুড়ির কোমর্বিডিটি রয়েছে। একটাই স্বস্তি, প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়া থাকায় ওঁদের বড় বিপদ হয়নি। সবাইকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করা যাচ্ছে।’’
কলকাতা পুরসভার পরিসংখ্যান বলছে, রবিবার শহরে যত জন আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে সাতটি শিশু রয়েছে। অতিমারির তৃতীয় ঢেউ এলে শিশুদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি বলে সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা। পুরসভা সূত্রের খবর, এই পরিপ্রেক্ষিতে সেফ হোমগুলিতে শিশুদের চিকিৎসায় যাবতীয় ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোভিডের তৃতীয় ঢেউ ঠেকাতে কী কী পদক্ষেপ করা যায়, তা নিয়ে সোমবার পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠক করেন পুর কমিশনার বিনোদ কুমার। সেখানে শহরের কোন কোন এলাকায় করোনা বাড়ছে, সেই এলাকাগুলি চিহ্নিত করে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুর স্বাস্থ্যকর্মীদের।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘‘প্রতিষেধক নিলেই আর করোনা হবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই। সাধারণ মানুষের কাছে একটাই অনুরোধ, প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও কঠোর ভাবে করোনা-বিধি মেনে চলুন। বাইরে বেরোলে মাস্ক পরতেই হবে। এড়িয়ে চলতে হবে ভিড়।’’ বক্ষরোগ চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগী বলছেন, ‘‘পুজো এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শহরের বাজারগুলিতে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। অনেকেরই মুখে মাস্ক নেই। এই প্রবণতা চলতে থাকলে কিন্তু বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। প্রতিষেধক নেওয়া হয়ে গিয়েছে বলে যাঁরা আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগছেন, করোনা-বিধি মানছেন না, তাঁরা নিজেদের পাশাপাশি বাড়ির সদস্যদেরও বিপদ ডেকে আনছেন।’’