রাতের শহরে টহলদারিতে বেরিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের এক কর্তা। দক্ষিণ কলকাতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কিছুটা দূরে গাড়ি রেখে সামনে এসে দেখলেন টহলদারিতে থাকা পুলিশকর্মীদের এক জন মগ্ন স্মার্ট ফোন নিয়ে। রাতের অন্ধকারে দূরত্ব বজায় রেখেই ওই পুলিশকর্তা নিজের মোবাইল ক্যামেরায় ছবিটি তোলেন। পরদিন তিনি তাঁর উচ্চপদস্থ কর্তাদের পুরো ঘটনার বিবরণ রিপোর্ট আকারে জমা দেন। ডিউটির সময়ে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকার অভিযোগে কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর ওই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
তার পরেই লালবাজার সূত্রের খবর, শুধু ওই কর্মী নন, কাজের সময়ে কোনও কর্মী কথা বলা ছাড়া মোবাইল নিয়ে অন্য কোনও কাজে ব্যস্ত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষ করে সেই কর্মী যদি কোনও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষার জন্য মোতায়ন থাকেন, তবে তো বটেই। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর বেশ কয়েক জন কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে বলে সূত্রের দাবি। তবে লালবাজার সূত্রের দাবি, নজরদারি বা সুরক্ষার দায়িত্বের বাইরে সাধারণ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকাকালীন পুলিশকর্মী বা অফিসারেরা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করলে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
কিন্তু কেন এমন কড়াকড়ি?
পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, শহরের সব গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য মোতায়ন করা হয় কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের। সেই সঙ্গে ভিভিআইপি-দের বাড়ির বাইরে নজরদারির জন্য থাকেন পুলিশকর্মীরা। অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে স্মার্ট ফোনের রমরমা শুরু হতেই অধিকাংশ পুলিশকর্মী নিজেদের ডিউটির মধ্যে তা নিয়ে মগ্ন থাকছেন। তা নজর এড়ায়নি পুলিশকর্তাদের। এর পরেই পুলিশের শীর্ষ কর্তারা ঠিক করেন গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানের বাইরে নিরাপত্তা বা নজরদারির জন্য মোতায়ন থাকা কর্মীরা মোবাইলে শুধু প্রয়োজন মতো কথা বলতে পারবেন। কিন্তু অন্য কিছু করতে পারবেন না তাঁরা।
লালবাজার জানিয়েছে, ওই সব জায়গায় যেই পুলিশকর্মীদের মোতায়ন করা হয়, তাঁদের নাশকতা-সহ জঙ্গি হানার মতো ঘটনা ঠেকানোর জন্য সব সময়ে সর্তক থাকা প্রয়োজন। কিন্তু মোবাইল ফোনে সোশ্যাল নেটওয়াকিংয়ে ব্যস্ত থাকলে পুলিশকর্মীর মনসংযোগে ঘাটতি হতে বাধ্য। ফলে কোনও ধরনের ঘটনা ঘটলে অস্ত্র নিয়ে তার জবাব দেওয়া সম্ভব নয় বলেই দাবি পুলিশকর্তাদের। তাঁদের মতে, দীর্ঘ সময় ডিউটি করার ফলে ক্লান্তি গ্রাস করে বাহিনীর সদস্যদের। সেই সঙ্গে স্মার্ট ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তাতে সর্তকতাতেও ঘাটতি দেখা যেতে পারে বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে। যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ এলাকার নজরদারিতেও খামতি দেখা দেবে বলে মত বাহিনীর কর্তাদের।
আরও পড়ুন:সত্যিই গোপন হচ্ছে তথ্য? তদন্তে নামছে কেন্দ্র
কলকাতা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, পুলিশকর্মীদের অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে মার্কিন দূতাবাসে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছিল। ওই একই কারণে যাতে অন্য কোনও ঘটনা না ঘটে, তার জন্য এ ব্যবস্থা কার্যকর হওয়া উচিত।