Durga Puja 201

Durga Puja 2021: অতিমারিতে আলোয় ফিরতে পুজোই ভরসা হস্তশিল্পীদের

করোনা আবহে গত দেড় বছর ধরে হাতে বানানো কাঠের পুতুল ও জিনিসপত্র কোথাও সে ভাবে বিক্রিই করতে পারেননি পূর্ব বর্ধমানের নতুনগ্রামের শিল্পীরা।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:৫৭
Share:

বর্ধমানের নতুনগ্রামের শিল্পীদের তৈরি কাঠের পুতুল দিয়েই সাজবে শহরের একটি মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র।

অতিমারি পরিস্থিতিতে ধাক্কা খেয়েছে তাঁদের জীবিকা। হাতে তৈরি জিনিস বিক্রি করতে না পেরে গত দেড় বছর ধরে সংসার চালানোই দায় হয়ে উঠেছে তাঁদের। এ বারের পুজো তাই সেই সব গ্রামীণ হস্তশিল্পীদের অনেকের কাছেই অন্ধকার থেকে আলোয় আসার একমাত্র উপায়। এ বছরের দুর্গাপুজোর মণ্ডপসজ্জায় তাঁদের শিল্পের ছোঁয়া দিয়েই কঠিন সময়ে কিছুটা বেঁচে ওঠার আশা দেখছেন তাঁরা।

Advertisement

করোনা আবহে গত দেড় বছর ধরে হাতে বানানো কাঠের পুতুল ও জিনিসপত্র কোথাও সে ভাবে বিক্রিই করতে পারেননি পূর্ব বর্ধমানের নতুনগ্রামের শিল্পীরা। গত বছর শীতের মেলাগুলিও একের পর এক বাতিল হয়ে যাওয়ায় সেখানেও নিজেদের পসরা সাজিয়ে বসতে পারেননি। এ বছর তাই তাঁরা তাকিয়ে রয়েছেন দুর্গাপুজোর দিকে। তাঁরা জানাচ্ছেন, বেলেঘাটার একটি ক্লাবের পুজোর মণ্ডপজসজ্জায় ব্যবহার করা হচ্ছে তাঁদের তৈরি কাঠের পুতুল। তারই কাজ চলছে জোরকদমে। নতুনগ্রামের শিল্পী গৌরাঙ্গ ভাস্কর বললেন, “আমাদের গ্রামের শিল্পীরা কাঠের পুতুল বানানোর জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। অনেক শিল্পী কাঠের পুতুল নিয়ে বিদেশেও গিয়েছেন। কিন্তু গত বছর লকডাউনের পর থেকে শিল্পীদের হাতে কাজ নেই। তাই সংসার চালানোই দায়। এ বারের পুজোয় মণ্ডপসজ্জার কাজ পেয়ে তাই ভাল লাগছে।” আর বেলেঘাটার ওই ক্লাবটির এক কর্মকর্তা সমর সাহা বলেন, “নতুনগ্রামের কাঠের শিল্পীদের জীবনযাত্রাই তুলে ধরা হবে আমাদের মণ্ডপে। তাই ওঁদের হাতেই সেই
দায়িত্ব দিয়েছি।”

পূর্ব মেদিনীপুরের নিমতৌড়ি গ্রামের শিল্পীদের পাট, ফোম, ফাইবার, স্পঞ্জের তৈরি মূর্তি ও জিনিসের কদর রয়েছে দেশ জুড়ে। প্রতি বছর পুজোর আগে ভিন্‌রাজ্য, বিশেষত ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, কর্নাটকের মণ্ডপসজ্জার কাজ করতে ডাক পড়ে তাঁদের। কিন্তু করোনার কারণে এ বারেও সেই পথ বন্ধ। নিমতৌড়ির এক শিল্পী দীপক সেনাপতি বলেন, “করোনা আসার পর থেকেই শিল্পীদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে। গত বছরের মতো এ বারেও ভিন্‌ রাজ্য থেকে বরাত মেলেনি। তবে আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে কলকাতার কিছু পুজোমণ্ডপ। শিয়ালদহ, বাঘা যতীন, বিধাননগর, যোধপুর পার্কের কয়েকটি মণ্ডপে আমাদের শিল্পীরা কাজ পেয়েছেন।” বেলঘরিয়ার যে ক্লাবের পুজোয় মণ্ডপ সাজাচ্ছেন নিমতৌড়ির শিল্পীরা, সেই ক্লাবের কর্মকর্তা অভিজিৎ চাকলাদার বলেন, “আমাদের মণ্ডপের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ, নদী-নালা বাঁচিয়ে রাখার বার্তা থাকবে। সূর্যের আলো যে কত প্রয়োজন, তা-ও বোঝানো হবে। এই মণ্ডপসজ্জার অধিকাংশই করছেন নিমতৌড়ির শিল্পীরা।”

Advertisement

একা করোনাই নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিল্পীদের ক্ষতি হয়েছিল ‘ইয়াস’ ঘূর্ণিঝড়ের সময়েও। এ বারের পুজো তাঁদের কাছেও উপার্জনের রাস্তা খুলে দিয়েছে। টালার একটি ক্লাবের পুজোয় এ বার মণ্ডপ সাজিয়ে তোলার বরাত পেয়েছেন ডায়মন্ড হারবার, লক্ষ্মীকান্তপুর, মথুরাপুরের শিল্পীরা। টালার ওই ক্লাবের কর্মকর্তা সুজিতলাল বর্মণ বলছেন, “এই শিল্পীরা মূলত সহকারী শিল্পী। কোনও মণ্ডপসজ্জায় মূল শিল্পীদের সঙ্গে থাকেন তাঁরা। তাঁদের ভূমিকা কিন্তু কিছু কম নয়, কিন্তু তবু কাজ পাচ্ছেন না তাঁরা। তাই ডায়মন্ড হারবার, লক্ষ্মীকান্তপুর, মথুরাপুরের সেই সব সহকারী শিল্পীদের হাতেই মণ্ডপসজ্জার গুরু দায়িত্ব দিয়েছি আমরা।” অতিমারি পরিস্থিতিতে এইসব সহকারী শিল্পীরা কী ভাবে আছেন, কাজের ক্ষেত্রে কতটা আপস করতে হচ্ছে তাঁদের— মণ্ডপসজ্জার মাধ্যমে নিজেদের জীবনের সেই গল্পই দেখাবেন সহকারী শিল্পীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement