ঝকঝকে হাসপাতালে পরিষেবা থাকুক সাধারণের আয়ত্তে, মত সভার

সকলের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত লক্ষ্য পূরণ যে সম্ভব নয়, সে কথাই জানিয়ে দিল শনিবার সন্ধ্যার ওই সভা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০৪
Share:

কথা: গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের আলোচনাসভায়। নিজস্ব চিত্র

এক সময়ে খোলা আকাশের নীচে অস্ত্রোপচার হত। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অপারেশন থিয়েটারের ভাবনা ছিল দূর অস্ত্‌। সেখান থেকে এখন চোখের সামনে ঝাঁ-চকচকে হাসপাতাল। কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছনো গিয়েছে কি? গোলপার্কে রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার আয়োজিত আলোচনাসভার বিষয় ছিল সেটাই। সকলের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত লক্ষ্য পূরণ যে সম্ভব নয়, সে কথাই জানিয়ে দিল শনিবার সন্ধ্যার ওই সভা।

Advertisement

বিবেকানন্দ হলে ‘সুরেন্দ্র পল স্মারক বক্তৃতা’য় প্রধান বক্তা ছিলেন কার্ডিয়ো-থোরাসিক চিকিৎসক কুণাল সরকার। সভার বিষয় ঠিক করে দিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের সেক্রেটারি স্বামী সুপর্ণানন্দ। বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের কথা তুলে ধরে চিকিৎশাস্ত্রের সে-কাল থেকে এ-কালের দিকে অগ্রসর হলেন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। নিজের স্ত্রীর হাতের ছবি তুলে বন্ধুকে পাঠিয়ে এক্স-রে প্লেটের আবিষ্কার সম্পর্কে জানিয়েছিলেন জার্মান চিকিৎসক উইলহেল্‌ম কনরাড রন্টজেন। যা জানতে পেরে আলোচনাচক্রের সভানেত্রী, চিকিৎসক রাজশ্রী রায়চৌধুরী রসিকতার সুরে বলেন,

‘‘স্বামীর সাফল্যের পিছনে স্ত্রীদের ভূমিকা চিকিৎসাশাস্ত্রের ক্ষেত্রেও খাঁটি বলতে হয়!’’

Advertisement

কুণালবাবু তাঁর বক্তৃতায় জানান, শরীরে রক্তপ্রবাহ কী ভাবে হয়, এক সময়ে চিকিৎসকদের সেই সম্পর্কে ধারণা ছিল না। সেই রহস্যের সমাধান করেন উইলিয়াম হার্ভে। বস্তুত, রোগ ‘কমিউনিকেব্‌ল’ হোক (যা এক জনের থেকে অন্য জনের শরীরে ছড়াতে পারে) বা ‘নন-কমিউনিকেব্‌ল’, প্রতিটি রোগের চিকিৎসা-পদ্ধতির অবিষ্কার ছোট গল্পের মতো। শেষ হয়েও হইল না শেষ! সেই শেষ না-হওয়া পথ ধরে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত থেকে উন্নততর হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তা সর্বসাধারণের আয়ত্তে আসেনি। সভার প্রধান বক্তার কথায়, ‘‘যে সব চিকিৎসা পরিষেবা আবিষ্কার হয়েছে বা হচ্ছে, তা যাতে ধরাছোঁয়ার মধ্যে থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্যি যে, স্বাস্থ্য এখন পণ্যে পরিণত হয়েছে।’’

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ যাতে চিকিৎসা পরিষেবা পান, তা নিশ্চিত করা লক্ষ্য হওয়া উচিত। কিন্তু এ রাজ্যে তো চিকিৎসা পরিষেবা বিনামূল্যে? তা হলে সেই পরিষেবা সর্বসাধারণের আয়ত্তে নেই কেন? কুণালবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু এটাও সত্যি, স্বাস্থ্য বিমা হাতে নিয়ে শয্যার জন্য এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে সাধারণ মানুষকে ঘুরতে হচ্ছে। অব্যবস্থাকে ব্যবস্থা বলে মেনে নিলে হবে না। যদি ইভিএমের মাধ্যমে শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে ভোটগ্রহণ সম্ভব হয়, তা হলে সুষ্ঠু ভাবে চিকিৎসা পরিষেবাও দেওয়া যায়।’’ কোন হাসপাতালে কত শয্যা খালি রয়েছে, প্রতিদিন তার একটা সার্বিক ছবি কেন থাকবে না সেই প্রশ্নও তোলেন কুণালবাবু।

এই পরিস্থিতির বদল ঘটাতে হলে আশাবাদী হওয়াই একমাত্র পথ বলে মত প্রধান বক্তার। সমস্বরে যে বক্তব্যকে সমর্থন জানালেন সভাগৃহে উপস্থিত দর্শকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement