খরচা বাড়ছে বৌবাজার মেট্রোর কাজে। — ফাইল চিত্র।
বৌবাজারে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজের জেরে বিপর্যয় ঘটেছে তিন-তিন বার। তাতে যাঁরা বাড়িছাড়া হয়েছেন, সেই স্থানীয় বাসিন্দাদের এককালীন ক্ষতিপূরণ দিতেই এখনও পর্যন্ত ১৫ কোটি টাকার উপরে খরচ হয়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর, বেশ কিছু আবেদনপত্র এখনও বিবেচনাধীন থাকায় ওই অঙ্ক আরও বাড়তে পারে।
গত ১৪ অক্টোবরের সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশের হাতে সম্প্রতি ৭১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসাবে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই পর্বে ১১টি পরিবারের প্রত্যেককে এককালীন পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় ছ’জন ব্যবসায়ীও ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন পেয়েছেন পাঁচ লক্ষ টাকা করে, অন্যদের দেওয়া হয়েছে মাথাপিছু দেড় লক্ষ টাকা।
মেট্রো সূত্রের খবর, ২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট প্রথম বার বিপর্যয়ের সময়ে সব চেয়ে বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তখন ক্ষতিপূরণ হিসাবে দিতে হয়েছিল ১৪ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা। চলতি বছরের মে মাসে ঘটে দ্বিতীয় বিপর্যয়। সেই সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের ২৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল মেট্রোকে।
তৃতীয় পর্বের বিপর্যয়ের পরে দু’মাস কেটে গেলেও এখনও দেড়শোর উপরে বাসিন্দা হোটেলে রয়েছেন। তাঁদের একাংশের বাড়ি মেরামতির কাজ চলছে। এমনকি, আগের দু’টি পর্বে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের একাংশও এখনও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বাড়ি ভাড়া নিয়ে আছেন। সেই টাকাও মেটাতে হচ্ছে মেট্রো নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থাকে।
এর পাশাপাশি, প্রথম বারের বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ২৩টি বাড়ি পুনর্নির্মাণের বরাত দেওয়া হয়েছে চলতি মাসে। পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে সেই নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা। তার জন্য প্রাথমিক ভাবে প্রায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বিপর্যয় সামাল দেওয়ার কাজই শুধু নয়, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বিশেষজ্ঞ সংস্থার পরামর্শ নিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সেই কাজে আরও কয়েকশো কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে খবর। গত অক্টোবর মাসের বিপর্যয়ের পরে এখনও বৌবাজারে কোনও নির্মাণকাজ শুরুই করা যায়নি।
বিপত্তি এড়িয়ে কী ভাবে এবং কত দিনে বাকি কাজ সম্পন্ন করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে মেট্রোর অন্দরেই। ফলে সামগ্রিক দেরির কারণে শুধুমাত্র বৌবাজারকে কেন্দ্র করেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর খরচের বোঝা আরও বাড়বে বলে একপ্রকার নিশ্চিত আধিকারিকেরা।
বিপত্তি সংক্রান্ত ক্ষেত্রে খরচের দায় নিয়ে মেট্রো এবং ঠিকাদার সংস্থার মধ্যে মতবিরোধ থাকায় বিষয়টি এখন সালিশি মীমাংসা প্রক্রিয়ার (আর্বিট্রেশন) অধীন। আধিকারিকদের একাংশ বলছেন, ওই মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃত খরচের ধারণা পাওয়া শক্ত।