ফাইল চিত্র।
আগে থাকতাম শহরের প্রাণকেন্দ্র চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ১৯৯৩ থেকে সল্টলেকের এফডি ব্লকের বাসিন্দা হয়েছি। আর পাঁচ জনের মতো নিরাপত্তা, পরিষেবা ও বাকি সব কিছু নিয়ে আমার কাছেও সল্টলেক ছিল ধাঁধার মতো। কিন্তু সেই ধন্দ কাটিয়ে ধীরে ধীরে ভালবেসে ফেলেছি বিধানচন্দ্র রায়ের স্বপ্ননগরীকে।
দিনের শেষে বাড়িতে এসে থাকতে বেশ ভাল লাগে। নিস্তব্ধ, নিরিবিলি পরিবেশে যেন মানসিক ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তাতেই উপলদ্ধি হয় অন্য জায়গার থেকে নিজের ভালবাসার জায়গার পার্থক্যটা। কিন্তু ইদানীং কিছু সমস্যা দেখছি। তার প্রথমটা হল, কিছু ক্ষণের বৃষ্টিতেই জল জমে যাওয়া। সেই জল বেরোতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এর জন্য নিকাশি ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে হবে বলেই মনে হয়। তবে এ ক্ষেত্রে পুর প্রশাসনের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনই জনসাধারণকেও সচেতন নাগরিকের পরিচয় দিতে হবে। যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ করা প্রয়োজন। তা হলে নিকাশি নালা বুজে যাবে না। একই রকম ভাবে দরকার খাল সংস্কার। তা হলে সল্টলেকের একটা বড় সমস্যা মশার উপদ্রব অনেকাংশে কমবে।
খাল সংস্কার করে সেটিকে সাজাতে পারলে এলাকার সৌন্দর্যায়ন হবে। যা সল্টলেকের আরও শ্রীবৃদ্ধি ঘটাবে। আরও একটি বিষয়ে আমার পর্যবেক্ষণ, খাল সংলগ্ন যে ব্লকগুলি রয়েছে, সেখানে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ, খাল পেরিয়ে অনেক দুষ্কৃতী যাতায়াত করে। বহু প্রবীণ মানুষ সল্টলেকে থাকেন, যাঁদের সন্তানেরা বিদেশে থিতু। তাঁদের নিরাপত্তার কথা ভেবে পুলিশি টহলদারি, অলিগলিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরার নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে বলব, প্রতিটি ব্লকে নিরাপদ ভাবে হাঁটাচলার ব্যবস্থাও রাখতে হবে। কারণ, হাঁটার জায়গাগুলিতে এখন অনেকেই গাড়ি রাখেন। আর কম-বেশি প্রতিটি ব্লকের রাস্তাই এবড়োখেবড়ো। ভারী গাড়ি যাতায়াত করায় সেগুলি আরও ভেঙে যাচ্ছে। তাই রাস্তার সংস্কারও জরুরি। বড় রাস্তারও কিছু জায়গায় খারাপ অবস্থা। গাড়িতে ঝাঁকুনি লাগে।
আমাদের এফডি, এফই ব্লকে সমাজের অনেক খ্যাতনামা মানুষ থাকেন। সে জন্য এই দু’টি ব্লকে একটু বেশি নজর দেওয়া হয়। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে নিকাশি, রাস্তাঘাটের সংস্কার একান্ত প্রয়োজন। আগে সল্টলেকবাসী হিসাবে গর্ব বোধ করতাম। কিন্তু এখন মনে হয়, সৌন্দর্যায়নের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে নিউ টাউন। বিদেশের মতো নিউ টাউনেও দেখেছি, পোষ্যদের জন্য পার্ক রয়েছে। আমার মতো অনেক সল্টলেকবাসীরই পোষ্য রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনও পার্ক নেই। উন্নত, আধুনিকতার ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ সল্টলেকে সেটা থাকা জরুরি বলেই মনে করি। এই উপনগরীর প্রতিটি ব্লকে বাজার, কমিউনিটি হল, পার্ক বা খেলার মাঠ রয়েছে। কিন্তু বয়স্কদের জন্য কোনও সিটিজেন্স পার্ক নেই। নিউ টাউনে কিন্তু নিরাপত্তা-সহ সেই ব্যবস্থা রয়েছে। সল্টলেকেও এমন ব্যবস্থা হওয়া দরকার। যেখানে সকাল-সন্ধ্যায় কিছু ক্ষণ নিরাপদে কাটাবেন প্রবীণ মানুষেরা।
আগের বোর্ডের ভাল-মন্দের বিতর্কে যাব না। তবে যে বা যাঁরাই ক্ষমতায় আসুন, বিধাননগরবাসীর স্বার্থে নিকাশি, রাস্তা-সহ আরও যা যা বললাম, সেগুলি সম্পর্কে ভাবনা-চিন্তা করলে খুব ভাল হবে। বিধানচন্দ্র রায়ের এই নগরীকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে একটা বিশেষ ধারণা রয়েছে। তাঁরা মনে করেন, সল্টলেক মানেই সুন্দর, পরিপাটি করে সাজানো উন্নত একটা শহর। সেই ধারণাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া জরুরি। তবে নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে একটা বিষয়ে আমি বিচলিত। প্রতিটি দলই তাদের প্রচার করবে, সেটা ঠিক। কিন্তু, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বার বার মাইক-লাগানো অটোয় করে তাঁরা নিজেদের বার্তা প্রচার করে চলেছেন। প্রতি মুহূর্তে এটা শুনতে কানে লাগছে। আমার মনে হয়, এক বার করে বললেই তো হয়। কারণ, মানুষ বোকা নন। তাঁরা জানেন, কে, কী কাজ করেন বা করেছেন। তাই ভোট তাঁকেই দেবেন। সব রাজনৈতিক দলকেই বলব, বার বার এক বক্তব্য এ ভাবে প্রচার করায় সাধারণ মানুষের মনে বিরক্তি তৈরি হচ্ছে। এ বার এ সব বন্ধ করুন।
গ্র্যান্ডমাস্টার দাবাড়ু