উদ্বোধনের অপেক্ষায় বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালের ডায়ালিসিস ইউনিট। নিজস্ব চিত্র
দিন কয়েক আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসেছিলেন বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি। শ্বাসকষ্টের কারণ খুঁজতে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই ব্যক্তির আগের রিপোর্ট পরীক্ষা করে দেখেন, তাঁর রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেশি। কিডনির সমস্যার কারণে শ্বাসকষ্টের অনুমান করে তাঁকে দ্রুত বাঙুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করে ডায়ালিসিসের পরামর্শ দেন। আপাতত ডায়ালিসিস চলছে ওই ব্যক্তির।
এ ভাবেই প্রায় প্রতিদিন বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে কিডনির সমস্যা নিয়ে আসা একাধিক রোগীকে এসএসকেএমে বা বাঙুরে স্থানান্তরিত করা হয়। এমনটাই জানাচ্ছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। কারণ, ডায়ালিসিসের পরিকাঠামো সেখানে এত দিন ছিল না। এ বার সেই অভাব মিটতে চলেছে।
পাঁচ শয্যার একটি ডায়ালিসিস বিভাগ বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে শীঘ্রই চালু হচ্ছে। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী নতুন বিভাগের উদ্বোধন করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সপ্তাহখানেকের মধ্যে ডায়ালিসিস পরিষেবা শুরু করা হবে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ডায়মন্ড হারবার ও বাঙুর, এই দু’টি হাসপাতালে ডায়ালিসিসের সুবিধা রয়েছে। ফলে ক্যানিং, জয়নগর, কুলতলি, বারুইপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের ডায়ালিসিসের দরকার হলে খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। সরকারি পরিকাঠামোর দীর্ঘ অপেক্ষা ছাড়া অন্য উপায় হল, টাকা খরচ করে বেসরকারি নার্সিংহোমে ডায়ালিসিস করানো। বারুইপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতে, ডায়ালিসিস চালু হলে সেই অভাব অনেকাংশে মিটবে। শুধু কিডনির সমস্যা নয়, সাপে কামড়ানো রোগীরও ডায়ালিসিসের প্রয়োজন হয়। হাসপাতালে সাপে কামড়ানো রোগী আসেনও অনেক। ফলে তাঁদের ডায়ালিসিসের প্রয়োজন বুঝলে স্থানান্তরিত করা হত এত দিন। এ বার তাঁদেরও চিকিৎসা সম্ভব হবে বলে জানাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নতুন এই বিভাগ চালু হলেও ‘রেফারে’র রোগ কবে কমবে, তা নিয়ে ধন্দে সাধারণ মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালকে বছর কয়েক আগেই সুপার স্পেশ্যালিটি মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ঝাঁ চকচকে ভবন, আধুনিক যন্ত্রপাতি অনেক কিছুই এসেছে। তবু রোগীকে স্থানান্তর করানোর রোগ কমল না। গুরুতর কিছু শারীরিক সমস্যা নিয়ে রোগী হাসপাতালে এলে এখনও তাঁকে রেফার করা হয় বলে অভিযোগ। সুতরাং নতুন বিভাগ কতটা পরিষেবা দিতে সক্ষম হবে, তা সময়ই বলে দেবে। ডায়ালিসিস ইউনিট চালু হলেও সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা সেখানে সম্ভব কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে।
বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার অচিন্ত্য গায়েন বলছেন, “এ কথা ঠিকই যে আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। কিডনির সঙ্গে অনেক সময়ই হার্ট বা অন্য সমস্যা থাকে রোগীর। সে ক্ষেত্রে এখানে চিকিৎসা করানো মুশকিল। এমন কিছু সময়ে রেফার করা ছাড়া উপায় থাকে না। তা সত্ত্বেও বলব বড় অংশের রোগী এই নতুন ইউনিট থেকে উপকৃত হবেন। পরে শয্যার সংখ্যাও বাড়ানো হবে।