বিক্ষোভ: হিন্দু স্কুলের সামনে অভিভাবকেরা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন স্কুলের ভবন রং করার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। স্কুলে স্কুলে বসছে কম্পিউটার, প্রজেক্টর। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত ক্লাসঘর, পরিস্রুত পানীয় জল, পরিচ্ছন্ন শৌচাগারের মতো ন্যূনতম পরিকাঠামোয় ঘাটতি রয়েই যাচ্ছে, সেই অভিযোগ বহু দিন ধরেই উঠছিল। সেই অভিযোগই বুধবার জোরালো মাত্রা পেল কলকাতার হিন্দু স্কুলে।
বুধবার প্রাতঃবিভাগে অভিভাবকেরা গিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানান, শৌচাগার নোংরা হয়ে থাকে। স্কুলের গেট পেরিয়ে রাস্তার কুকুর ঢুকে পড়ুয়াদের তেড়ে যায়। কয়েক জনকে আঁচড়-কামড়ও দিয়েছে। এ নিয়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। পরে কলেজ স্ট্রিট অবরোধও করেন অভিভাবকেরা। কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ ওঠে। হিন্দু স্কুল এ নিয়ে বিকাশ ভবনে শিক্ষা দফতরে অভিযোগও জানাচ্ছে। স্কুল সূত্রের খবর, হিন্দু স্কুলে দু’জন সাফাইকর্মী রয়েছেন। কিন্তু এক জন নিজের দায়িত্ব .যথাযথ ভাবে পালন করেন না।
স্কুলশিক্ষা দফতরের দাবি, স্কুলবা়ড়ি রং করার মতো শৌচাগার নিয়মিত সাফাই করার উপরেও জোর দেওয়া হয়। এর জন্য টাকাও বরাদ্দ করা হয়। তা সত্ত্বেও শৌচাগার অপরিষ্কার থাকছে কেন? দফতরের কর্তারা এর দায় চাপাচ্ছেন স্কুলগুলির উপরে। কিন্তু স্কুলে কী হচ্ছে, দফতর কেন সে দিকে নজর রাখে না, পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকে। দফতরের বক্তব্য, সব স্কুলে ঘুরে ঘুরে দেখার ফুরসত নেই।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর বক্তব্য, প্রচুর স্কুলে সাফাইকর্মীর শূন্যপদ খালি। সেটাও অপরিচ্ছন্নতার অন্যতম কারণ। একই সুর সরকার পোষিত বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও। তাঁরা বলছেন, অনেক সময়ে ঠিকা সাফাইকর্মী রাখা হয়। কিন্তু সেই ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। মেয়েদের অনেক স্কুলে পর্যাপ্ত শৌচাগার থাকে না। একটি শৌচাগারে অনেকে ব্যবহার করার ফলে সেটি তাড়াতা়ড়ি নোংরা হয়। অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার থেকে ছাত্রীদের সংক্রমণের ভয়ও থাকে। বিশেষ করে ঋতুস্রাবের সময়ে বিষয়টি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। শহরতলির একটি স্কুলের এক শিক্ষিকা বলছেন, ‘‘অনেক সময়ে শৌচাগার এড়াতে স্কুলে ছাত্রীরা পর্যাপ্ত জল খায় না। সেটাও স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে।’’
শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলছেন, পানীয় জলের জন্য জল পরিশোধনের যন্ত্র বহু স্কুলেই নেই। ফলে ট্যাঙ্কের জলই খেতে হয়। এক শিক্ষকের বক্তব্য, ‘‘স্কুলের ভাঁড়ার থেকে বড় জোর দু’-একটি ছোট পরিশোধন যন্ত্র বসানো যেতে পারে। কিন্তু হাজার দেড়েক পড়ুয়া তা থেকে জল পাবে কি?’’ গরমকালে ট্যাঙ্কের জল গরম হয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।
সর্বশিক্ষা মিশনের নিয়ম অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এক-একটি ক্লাসে ৩০ জন করে পড়ুয়া থাকার কথা। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান। কিন্তু বাস্তবে ছবিটা অনেকটাই আলাদা। অনেক ক্লাসঘরেই পাখার সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। ফলে তীব্র গরমে ঠাসাঠাসি করে বসে পড়াশোনা করা কার্যত অসম্ভব। স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সর্বশিক্ষা মিশনের বরাদ্দ টাকায় তৈরি ঘরে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস করানো যায়। কিন্তু নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে তুলনামূলক ভাবে পড়ুয়া বেশি থাকায় ওই ঘরগুলি নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য ব্যবহার হচ্ছে।
একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির তরফে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন সরকারি স্কুলে প্রাতঃ ও দিবা বিভাগের প্রধান শিক্ষকের এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। সাফাইকর্মী নিয়োগের দিকেও লক্ষ্য নেই কারও। স্কুল পরিচালনের ক্ষেত্রে এই সব গুরুত্বপূর্ণ পদ দ্রুত পূরণ না করলে সমস্যা রয়েই যাবে। স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তারা অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন, এই সব সমস্যা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।