ইচ্ছেপূরণ: বৃষ্টির সঙ্গে হাজির ইলিশও। রবিবার মানিকতলা বাজারে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হল। দেখা মিলল রুপোলি শস্যের। আর তাতেই থলে হাতে বাজারে আসা ক্রেতাদের চোখমুখে খুশির ঝিলিক। এ বার বৃষ্টি কম হওয়ায় শহরবাসীর আশঙ্কা ছিল, তবে কি ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিতই থাকবেন ক্রেতারা!
কিন্তু রবিবাসরীয় সকালে মানিকতলা, গড়িয়াহাট, শিয়ালদহ কিংবা লেক এলাকার বিভিন্ন বাজারে কমবেশি ইলিশের দেখা সেই আশঙ্কা কিছুটা স্তিমিত করেছে। মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, জোগান কম থাকলেও এই মরসুমে শহরে শনিবার থেকেই ইলিশ ঢুকছে। এত দিন চাহিদার তুলনায় জোগান কম ছিল, যার জেরে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছিল ইলিশ। তবুও অনেক মৎস্যপ্রেমীই বেশি দাম দিয়েই বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন তাকে। এ দিন শহরের বিভিন্ন বাজারে ৬০০-৭০০ গ্রাম ইলিশ বিকিয়েছে ৭০০ টাকায়, ৭০০-৮০০ গ্রাম ইলিশ ৯০০ টাকায় এবং এক থেকে দেড় কেজি ওজনের মাছ বিক্রি হয়েছে ১০০০-১২০০ টাকায়। ক্রেতা সামলাতে সামলাতে হাসি মুখে মানিকতলা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী প্রদীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘খুবই চিন্তায় ছিলাম। এক মাস ধরে ক্রেতারা এসে ইলিশের খোঁজ করতেন। দাম শুনে বেশির ভাগই ফিরে গিয়েছেন। শনিবার থেকে ইলিশ আসায় সেই দাম কিছুটা হলেও নেমেছে। ফলে ক্রেতারা ধীরে ধীরে ইলিশমুখী হচ্ছেন।’’ গড়িয়াহাট, লেক মার্কেট থেকেও মাছ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ইলিশের বিক্রি বাড়ছে।
মৎস্যবিজ্ঞানী অমলেশ চৌধুরীর মতে, ‘‘মৎস্যজীবীদের জালে ইলিশ ঢোকার অনুকূল পরিস্থিতি হল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর পুবালি বাতাস। গত সপ্তাহ থেকে এমন আবহাওয়া দেখা দেওয়ায় জালে ইলিশ উঠছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘একটা নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। এর পর বৃষ্টি হলেই ফের জালে ইলিশ ধরা পড়ার প্রবল সম্ভাবনা।’’ তবে এখনও চাহিদার তুলনায় জোগান যে কম, বলছেন মাছ ব্যবসায়ীরাই। ডায়মন্ডহারবারের মাছের আড়তদার বিজয় সিংহ বলেন, ‘‘শুক্রবার পর্যন্ত ডায়মন্ডহারবারের আড়তে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ টন ইলিশ ঢুকেছে। নতুন করে নিম্নচাপের সৃষ্টি হওয়ায় শুক্রবার রাত থেকে ট্রলার ডাঙায় ফিরে এসেছে। ফলে শনি ও রবিবার ইলিশ ধরা যায়নি।’’ মাছ আমদানিকারক সংস্থার সভাপতি অতুলচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘রাজ্যে প্রতিদিন ৫০০ টন ইলিশের প্রয়োজন। গত তিন দিন সমুদ্র থেকে সব মিলিয়ে ইলিশ উঠেছে প্রায় ১০০ টন। ফলে অন্য বছরের তুলনায় রবিবারে বেশি দামে ইলিশ কিনেছেন ক্রেতারা।’’
দক্ষিণের এক শপিং মলে। নিজস্ব চিত্র
প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘গত বছর এই সময়ে ৫০০-৭০০ গ্রাম ইলিশ ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি করেছি। বুঝতেই পারছেন, এ বার ইলিশের অভাব কতটা।’’ তবে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের আশ্বাস, ‘‘ইলিশ নেই বলে চিন্তার কিছু নেই। অন্য বছরও দেরিতে বর্ষা ঢোকায় পরের দিকে ইলিশ এসেছিল।’’