প্রতীকী ছবি।
রোগী প্রত্যাখ্যান রোধে বৈঠক হয়েছে দফায় দফায়। এর পর থেকেই কোন বেসরকারি হাসপাতালে কত শয্যা খালি, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে নিয়মিত সেই তালিকা প্রকাশও হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালে শয্যার খোঁজে রোগী-হয়রানি তাতেও যে কমেনি ৭৭ বছরের এক বৃদ্ধের ঘটনা তা প্রমাণ করল।
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার রাতে। রিষড়ার বাসিন্দা সিওপিডি রোগী অলোকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আনন্দপুর ফর্টিসে নিয়ে যান পরিজনেরা। মেয়ে এণাক্ষী মুখোপাধ্যায় জানান, বুকের এক্স-রে এবং এবিজি করিয়ে হাসপাতাল বলে, করোনা সন্দেহভাজনকে আইসিইউয়ে রাখতে হবে, কিন্তু তাদের শয্যা নেই।
স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইট থেকে খালি শয্যার তালিকা দেখে হাসপাতালগুলিতে ফোন করা হয়। এণাক্ষীর কথায়, ‘‘উডল্যান্ডস, আমরি ঢাকুরিয়া, কোঠারি, ডিসান, চার্নক— কোথাও শয্যা পাইনি। অনেকে ফোন ধরেওনি। শেষে অল এশিয়া মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট নামে গড়চার এক হাসপাতাল বাবাকে আনতে বলে।’’
রাত দেড়টা নাগাদ সেখানে গেলে বলা হয়, রিসেপশন থেকে ভুল তথ্য দিয়েছে! শয্যা নেই। গভীর রাতে তপসিয়ার একটি নার্সিংহোমে বৃদ্ধ শয্যা পান। এক আত্মীয় চন্দ্রজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘কোভিড পজ়িটিভ রোগীর পাশে সেখানে ওঁকে স্যালাইন দিয়ে রেখেছিল। আট ঘণ্টায় ২০ হাজার টাকা বিল হয়!’’ অবশেষে শনিবার একবালপুরের একটি নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করা হয়।
বেসরকারি হাসপাতালে শয্যার জন্য রোগী-হয়রানির আরও একটি ঘটনা গত আটচল্লিশ ঘণ্টায় সামনে এসেছে। জ্বর, ডায়রিয়া, মৃদু শ্বাসকষ্টের উপসর্গযুক্ত বেহালার বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের প্রৌঢ়কে নিয়ে একাধিক হাসপাতালে ঘোরেন পরিজনেরা। শেষে বেহালারই এক নার্সিংহোমে ভর্তি হন।
স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একটি অংশের বক্তব্য, চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামো রয়েছে এমন হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে অনেকেই ছোট নার্সিংহোমে করোনা সন্দেহভাজন গুরুতর রোগীকে ভর্তি করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, সম্প্রতি কোভিড পজ়িটিভ মৃতদের পাশে এমন নার্সিংহোম রয়েছে, যার নামই শোনা যায়নি!
মেডিকার কর্ণধার অলোক রায় জানান, শনিবার তাঁরা আরও ৪০টি শয্যা বাড়িয়েছেন। এই মুহূর্তে সেখানে কোভিড-আইসিইউ শয্যা ৫২টি ও করোনা সন্দেহভাজন-আইসিইউ শয্যা ২০টি। তাঁর মতে, সব হাসপাতাল রোগী নিলে এই সমস্যা হত না। পিয়ারলেসের সিইও সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘‘এক সপ্তাহে গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আরটি-পিসিআরে নমুনা পরীক্ষায় সিটি-ভ্যালুর মাধ্যমে সেটি বোঝা যায়। সিটি-ভ্যালু কম মানে ভাইরাল লোডের মাত্রা বেশি। সিটি-ভ্যালু আগে ৩০-এর উপরে থাকত, এখন ২০-২৫ এর মধ্যে দেখা যাচ্ছে।’’
‘অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন রিজিয়ন’-এর সভাপতি তথা আমরি গ্রুপের সিইও রূপক বড়ুয়া বলেন, “প্রচুর মানুষ বহির্বিভাগে করোনা পরীক্ষা করাতে আসছেন। পজ়িটিভের সংখ্যাও বেড়েছে। সে সব সামলাতে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আইসিইউ ও এইচডিইউ-এর পাশাপাশি সাধারণ শয্যাও প্রায় ভর্তি।’’
একই ছবি সরকারি হাসপাতালেও। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিসিইউ এবং এইচডিইউ মিলিয়ে ৪৪টি শয্যা। হাসপাতালের এক আধিকারিক জানান, বর্তমান রোগীর দশ শতাংশকে ক্রিটিক্যাল কেয়ারে রাখতে হলে শয্যার অভাব ঘটছে। এম আর বাঙুরে ২৩টি সিসিইউ শয্যার সব ভর্তি। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সেখানে ১৬টি শয্যা বাড়ানোর কথা। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সিসিইউ (১৪) এবং এইচডিইউ (১৭) মিলিয়ে ৩১টি শয্যার উপরেও চাপ রয়েছে।
গত শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতরের একটি অ্যাডভাইসরিতেও স্বীকার করা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে সঙ্কটজনক রোগীরা আইসিইউ শয্যা পাচ্ছেন না! স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, এই অবস্থায় জোর দেওয়া হচ্ছে অক্সিজেন-শয্যা বাড়ানোয়।