পরিদর্শন: টালা বাজি বাজারের মাঠে পুলিশ, দমকল ও পুরসভার আধিকারিকেরা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
কালীপুজোর আর বাকি দিন ছয়েক। তবু বাজি ব্যবসায়ীদের দমকলের ছাড়পত্র নবীকরণ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুই হল না। ফলে বাজি বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়েও মঙ্গলবার দিনভর জটিলতা চলল। এ দিন থেকেই শহরের তিন জায়গায় বাজি বাজার শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হল না। দিনের শেষে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) দিয়ে বাজি বাজার করার অনুমতি দেওয়া হলেও কবে বাজারের বাইরের ব্যবসায়ীদের দমকলের ছাড়পত্র মিলবে বা আদৌ দেওয়া হবে কি না, তা স্পষ্ট হল না।
চলতি বছরে শহিদ মিনার ও বিজয়গড়ে বাজির বাজার হচ্ছে না। টালা, বেহালা এবং কালিকাপুরে হতে চলেছে কলকাতা পুলিশের তত্ত্বাবধানে বাজি বাজার। কলকাতা হাই কোর্ট চলতি বছরের কালীপুজোয় সন্ধ্যা ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শুধুমাত্র সবুজ বাজি ফাটানোর ছাড়পত্র দিয়েছে। এর পরেই কলকাতা পুলিশ বাজির ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠকে শুধুমাত্র সবুজ বাজি বিক্রির ছাড়পত্র দিয়ে বাজার শুরুর অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু তাতেও জটিলতা হয় ‘ফায়ার লাইসেন্স’ নিয়ে।
গত তিন-চার বছর ধরেই এই রাজ্যে দমকল বিভাগের তরফে কোনও বাজি ব্যবসায়ীর লাইসেন্স নবীকরণ হয়নি। এত দিন দমকল বিভাগের যুক্তি ছিল, সব রকমের বাজি বিক্রি এবং ফাটানো নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল আদালত। তাই লাইসেন্স নবীকরণের প্রশ্ন ওঠেনি। কিন্তু চলতি বছরে হাই কোর্ট অন্য রকম রায় দেওয়ায় এই দাবি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বাজি ব্যবসায়ীদের তরফেও দফায় দফায় দমকল বিভাগের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। এর পর এ দিনই টালা বাজি বাজার পরিদর্শনে যান কলকাতা পুলিশের কর্তারা। ছিলেন দমকল এবং পুরসভার আধিকারিকেরাও। সেখানে ফায়ার টেন্ডার রেখে দমকলের তরফে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ দিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। একই ভাবে এই সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে কালিকাপুর এবং বেহালার বাজি বাজারের উদ্যোক্তাদেরও। কিন্তু এই বাজারগুলির কোনওটিতেই স্টল দেওয়া বাজি ব্যবসায়ীদের আলাদা করে দমকলের লাইসেন্স এখনও পর্যন্ত নেই।
কালিকাপুর, অর্থাৎ ইস্ট ডিভিশন বাজি বাজারের সম্পাদক শ্যামাপ্রসাদ মজুমদার বললেন, ‘‘অন্যান্য বার ৩৫টি মতো বাজির স্টল হয় আমাদের বাজারে। এ বার ১১টি স্টল হচ্ছে। সবুজ বাজির জোগান খুবই কম। বিক্রেতার সংখ্যাও কম। দমকলের তরফে বাজির বাজারের জন্য যে এনওসি দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যেই এই ১১টি স্টলের ছাড়পত্র রয়েছে। কিন্তু এর বাইরের বাজি ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নিয়ে কী হবে, জানা নেই।’’ একই দাবি বেহালার ‘সোসাইটি ফর বাজি বাজার ব্যবসায়ী, দক্ষিণ ২৪ পরগনা’-র উদ্যোক্তাদের। সেখানকার বাজি বাজারের কোষাধক্ষ্য অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘৪০টি থেকে স্টল ১৪-তে নেমে এসেছে। এর মধ্যে লাইসেন্সের জটিলতা চলছে। দেরিতে প্রস্তুতি শুরু হওয়ায় আগামী বৃহস্পতিবারের আগে বাজার খোলা যাচ্ছে না।’’
দমকল বিভাগের কেউই এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি। এক দমকলকর্তা জানিয়েছেন, সব দিক খতিয়ে দেখতে ধীরে চলো নীতি নেওয়া হয়েছে। জেলাশাসকের মাধ্যমে ফায়ার লাইসেন্স দেওয়া যায় কি না, সেই ভাবনাচিন্তা চলছে। ‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না বললেন, ‘‘বাজারের ফায়ার লাইসেন্সের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব লাইসেন্সের কোনও যোগ নেই। তবে সবুজ বাজি তৈরির ছাড়পত্র পেয়ে যাওয়া কোনও ব্যবসায়ীরই এই ভাবে লাইসেন্স নবীকরণ আটকানো যায় না। আমরা প্রয়োজন হলে আদালতের দ্বারস্থ হব।’’