অতীতে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ার জন্য রাজ্যের উপরে জরিমানা ধার্য করা হয়েছিল। ফাইল চিত্র।
দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কী লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল, কেন তা পূরণ হল না— এই সমস্ত কারণ এ বার থেকে তাঁদের বার্ষিক রিপোর্টে (এসএআর বা সামারি অ্যানুয়াল রিপোর্ট) উল্লেখ করতে হবে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক, ইঞ্জিনিয়ারকে। আর তাঁরা যাতে এই কাজ বাধ্যতামূলক ভাবে করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে দফতর অধীনস্থ সেই পুরসভা, পুরনিগম, ডিরেক্টরেট, সংস্থা-সহ সব পক্ষকে। চলতি সপ্তাহেই রাজ্যের সমস্ত পুর কর্তৃপক্ষকে এই নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।
কারণ, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ ছিল, কেন দূষণ নিয়ন্ত্রণের কোনও প্রকল্প ব্যর্থ হল, তার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে ‘দায়বদ্ধ’ করতে হবে। তাতে প্রকল্পের সাফল্য সুনিশ্চিত করা যাবে। এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে দফতরের আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, অতীতে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ার জন্য রাজ্যের উপরে জরিমানা ধার্য করা হয়েছিল। তার পরে গত সেপ্টেম্বরেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার জন্য রাজ্য সরকারকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ ধার্য করেছিল আদালত। এবং সমস্ত ক্ষেত্রেই প্রকল্পগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের ‘ভূমিকা’ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তা ছাড়া, একাধিক মামলার ক্ষেত্রেও পরিবেশ আদালতের নির্দেশ ছিল, শুধুমাত্র দায় এড়িয়ে গেলে চলবে না। কেন কোনও প্রকল্প ব্যর্থ হচ্ছে, তার জন্য নির্দিষ্ট ভাবে কাউকে দায়বদ্ধ করতে হবে। দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘সেই কারণে কঠিন, তরল, স্তূপীকৃত বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণ, বায়ু ও শব্দদূষণের যে সমস্ত প্রকল্প এই মুহূর্তে রাজ্যে চলছে, সবের ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহ থেকেই এই নির্দেশ কার্যকর হয়েছে।’’
দফতর সূত্রের খবর, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, বার বার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও ইঞ্জিনিয়ার, আধিকারিকদের একাংশের কাজে গাফিলতির কারণে পরিবেশ আদালতে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। পরিবেশবিধি পালনে ব্যর্থতার জন্য আদালত ক্ষোভ জানিয়েছে। দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, আসলে পরিবেশ বা পরিবেশবিধি পালন নিয়ে আগে এত কড়াকড়ি ছিল না। ফলে প্রশাসনিক মহলে এ বিষয়ে ততটা ‘তৎপরতা’ও ছিল না। বরং একটা গয়ংগচ্ছ মনোভাবই ছিল আধিকারিকদের মধ্যে। কিন্তুগত কয়েক বছর ধরে পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় পরিবেশ আদালতের কড়া নির্দেশের পরে পরিবর্তন এসেছে। রাজ্যের প্রায় প্রতিটি পুরসভা, পুরনিগম, ডিরেক্টরেট, পর্ষদ-সহ সমস্ত প্রতিষ্ঠানেই আদালতের নির্দেশের মান্যতা সুনিশ্চিত করতে কর্মী, আধিকারিকদের দায়িত্বদেওয়া হয়েছে।
কিন্তু তার পরেও দেখা যাচ্ছে, বাস্তবে তার পুরোপুরি প্রতিফলন ঘটছে না। কারণ দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের রূপায়ণের জন্য খাতায়কলমে আধিকারিকদের দায়িত্ব দেওয়া এবং সেই দায়িত্ব পালনে ফাঁক থেকে যাচ্ছে। অর্থাৎ, গোড়াতেই গলদ থেকে যাচ্ছে। তাই সেই ‘ত্রুটি’ শোধরাতেই এ বার নগরোন্নয়ন দফতরের এই নির্দেশ।
যদিও এক পরিবেশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘এ রকম নির্দেশিকা তো সরকারের তরফে বিভিন্ন সময়েই দেওয়া হয়। তাতে কাজ হয় কোথায়? কাজ হলে আদালতে বার বার রাজ্য সরকারকে অস্বস্তিতে পড়তে হত না।’’