সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতি বছরই বর্ষার আগে লালবাজারের তরফে থানাগুলিকে একগুচ্ছ নির্দেশ পাঠানো হয়। ফাইল চিত্র
কলকাতা পুলিশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে নামলেও শহরে ডেঙ্গির পরিস্থিতি ভয় ধরাচ্ছে। বাহিনীর কারও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর লালবাজারের কাছে না থাকলেও অনেকেই জ্বর ও বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসাধীন বলে খবর। সূত্রের খবর, পরিস্থিতি বুঝে ইতিমধ্যেই লালবাজারের তরফে প্রতিটি থানাকে সতর্ক করার পাশাপাশি থানা চত্বর পরিষ্কার রাখার কথা বলা হয়েছে। পুরসভার তরফেও বিভিন্ন বরো এলাকায় পুলিশ এবং জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে উঠে এসেছে ডেঙ্গি মোকাবিলার প্রসঙ্গ।
গত দু’বছরে শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ সে ভাবে দেখা না গেলেও এ বছর তা বেড়েছে। ইতিমধ্যেই শহরে আক্রান্তের সংখ্যা দুশোর গণ্ডি পেরিয়েছে বলে খবর। দিনকয়েক আগে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও হয়েছে এক ছাত্রের। লালবাজার সূত্রে যদিও জানা গিয়েছে, শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়লেও এ বছর এখনও পর্যন্ত বাহিনীর কারও আক্রান্ত হওয়ার খবর নেই। তবে, ২০১৯ সালে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল কলকাতা পুলিশের এক মহিলা কনস্টেবলের। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বাইপাসের এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল সন্তানসম্ভবা রুনু বিশ্বাসকে। সন্তান প্রসবের ১১ দিনের মাথায় মৃ্ত্যু হয় তাঁর। সন্তানের জন্মের পরেও জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। পরে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। আমহার্স্ট স্ট্রিট মহিলা থানায় কর্মরত ওই কনস্টেবলের মৃত্যুর পরে হাসপাতালের তরফে দেওয়া রিপোর্টেও তাঁর ডেঙ্গি আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ ছিল। তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির উল্লেখ থাকার পাশাপাশি লেখা ছিল ‘সেপটিক শক উইথ মাল্টি অর্গান ফেলিয়োর’।
যদিও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতি বছরই বর্ষার আগে লালবাজারের তরফে থানাগুলিকে একগুচ্ছ নির্দেশ পাঠানো হয়। সেখানে থানা চত্বর পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ভগ্নপ্রায় গাড়িগুলিকে ডাম্পিং স্টেশনে সরানোর নির্দেশ থাকে। থানা চত্বরে যাতে কোনও ভাবে জল জমে না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখারও কথা বলা হয়। এ বছরও এই নির্দেশের ব্যতিক্রম হয়নি বলে একাধিক থানা সূত্রের খবর। পাশাপাশি, ব্যারাকগুলিতেও যাতে ডেঙ্গি সংক্রমণ না ছড়ায়, সে দিকে নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি, দিনকয়েক আগে থানার প্রতিনিধিদের নিয়ে লালবাজারের পক্ষ থেকে বৈঠকও করা হয়। সেই বৈঠকে ডেঙ্গি নিয়ে সতর্ক করা হয় বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পাশাপাশি, ডেঙ্গির প্রকোপ রুখতে থানা এলাকায় সচেতনতার প্রচার চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যেই একাধিক থানার তরফে সচেতনতার প্রচার শুরু হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, পুরসভার তরফেও বিভিন্ন বরো এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি থানার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকে ডেঙ্গির মোকাবিলায় এলাকায় জল জমতে না দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছে। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ডেঙ্গির মোকাবিলায় প্রতি বছর থানা এবং গার্ডগুলিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। গত দু’বছরের তুলনায় এ বছর যে হেতু ওই রোগের প্রকোপ বেশি, তাই বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের তরফেও সচেতনতার প্রচার চলছে।’’