চলানো হচ্ছে মশা মারার কামান। — ফাইল চিত্র।
পঞ্চাশ হাজারের একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গেল বঙ্গে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ২ নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ হাজার ৫৭ জন। গত এক সপ্তাহে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৫৩৯৬ জন। স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বিগত বছরগুলির মোট আক্রান্তের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ২০২২।
স্বাস্থ্য দফতরের ওই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সামগ্রিক ভাবে রাজ্যে ডেঙ্গি সংক্রমণের হার ১২.৭ শতাংশ। প্রতিটি জেলাকে আলাদা করে ধরলে পজ়িটিভিটি রেট বেশির নিরিখে প্রথমে রয়েছে কলকাতা (২৪.৮ শতাংশ)। তার পরে উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি-সহ অন্যান্য জেলা রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, হুগলি, জলপাইগুড়ি— এই ছ’টি জেলায় প্রথম থেকেই ডেঙ্গি সংক্রমণের লেখচিত্র ছিল ঊর্ধ্বমুখী। গত এক সপ্তাহেও সব থেকে বেশি মানুষ আক্রান্ত হন উত্তর ২৪ পরগনায় (১১৬৬)। তার পরে মুর্শিদাবাদ (৮৬৪), কলকাতা (৬৮১)। কিন্তু গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গির পরীক্ষা ও তার নিরিখে আক্রান্তের হিসাব কষলে দেখা যাচ্ছে, মুর্শিদাবাদ ছাড়া বাকি পাঁচটি জেলায় সংক্রমণ আগের কয়েক সপ্তাহের থেকে কিছুটা হলেও কম। যদিও তাতে রাজ্যের স্বস্তি নেই। কারণ, অন্য পাঁচটি জেলায় (স্বাস্থ্য জেলা-সহ) বাড়তে শুরু করেছে আক্রান্তের সংখ্যা। সেগুলি হল: নদিয়া, বসিরহাট, ডায়মন্ড হারবার, আলিপুরদুয়ার ও পূর্ব মেদিনীপুর। গত এক সপ্তাহে এই সব ক’টি জেলাতেই তার আগের সপ্তাহের তুলনায় গড়ে ৫-৫০ শতাংশ পর্যন্ত সংক্রমণ বেড়েছে।
এ দিন প্রতিটি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্যকর্তারা। সূত্রের খবর, সেখানে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, নতুন করে কয়েকটি জেলায় সংক্রমণ বৃদ্ধি মোটেই স্বস্তির নয়। তাই প্রতিটি জায়গায় ডেঙ্গি পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে। কমাতে হবে পজ়িটিভিটি রেটও। পাশাপাশি, মশার বংশবিস্তার রোধ এবং ডেঙ্গির চিকিৎসাতেও জোর দেওয়া হয়েছে। কালীপুজোর সময়ে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির ফলে অনেক জায়গায় জল জমে রয়েছে। সেখানেই বংশ বিস্তার করছে ডেঙ্গির মশা।
সেই কারণে প্রতিটি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের বলা হয়েছে, জেলাশাসক ও ব্লক আধিকারিকের পাশাপাশি স্থানীয় পুরসভা ও পঞ্চায়েত-কর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে। অন্য দিকে, মুর্শিদাবাদে যে হেতু সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, তাই ওই জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বহরমপুর পুরসভার পাশাপাশি ভগবানগোলা-১ ও লালগোলা ব্লকের আধিকারিকদের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে বলা হয়েছে বলে খবর।
তবে কলকাতা নিয়ে এখনও স্বস্তিতে নেই স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, ডেঙ্গির পজ়িটিভিটি রেট এখনও কলকাতাতেই সর্বোচ্চ। গত এক সপ্তাহে ২৭৪৭ জনের মধ্যে ৬৮১ জন পজ়িটিভ। অন্য দিকে, উত্তরবঙ্গেরজলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, জলপাইগুড়িতে আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও, পরীক্ষার নিরিখে পজ়িটিভিটি রেট মোটেই কম নয়। গত এক সপ্তাহে সেখানে ১০৮৬ জনের পরীক্ষায় ২৬৬ জন পজ়িটিভ। আবার আলিপুরদুয়ারেও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।