গাঁধীগিরি: নাগেরবাজারে হেলমেটহীন স্কুটিচালকের হাতে রাখি বেঁধে সচেতন হতে বললেন ট্র্যাফিক গার্ডের আধিকারিকেরা ছবি: শৌভিক দে
রক্ষাকবচের বার্তায় বাঁধা পড়ল রাখি উৎসব! এডিস ইজিপ্টাইয়ের বিনাশ চেয়ে ডেঙ্গি সচেতনতার রাখি পরতে হাত বাড়িয়ে দিলেন ডেঙ্গি সংক্রমণে মাকে হারানো মেয়ে। অন্য দিকে দু’চাকায় সওয়ার হয়ে মাথার রক্ষাকবচ কেন প্রয়োজন, পুলিশকর্তার কাছে সেই পাঠ নিলেন মা।
রাখির সুতোয় বিভিন্ন রকমের বার্তা দেওয়ার চল নতুন নয়। এ বছর শোভাবাজার ও বাগুইআটির দু’টি সংস্থা রাখির মাধ্যমে ডেঙ্গি সচেতনতার প্রচারে পথে নেমেছিল। গত নভেম্বরে ডেঙ্গি সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছিল বাগুইআটির অশ্বিনীনগরের বাসিন্দা পাপিয়া চক্রবর্তীর (৫৩)। খানিক সংশয় নিয়েই এ দিন পাপিয়াদের ফ্ল্যাটে ‘ডেঙ্গি যাক, মশা যাক, মানুষ থাক’-এর স্লোগান তুলে রাখি পরাতে গিয়েছিলেন বাগুইআটির সংস্থাটির সদস্যেরা। তাঁদের মুখে আগমনের কারণ জানা মাত্র সচেতনতার রাখি পরেন মেয়ে শর্মিষ্ঠা কর্মকার, মৃতার স্বামী স্বপন চক্রবর্তী এবং ছেলে শুভজিৎ চক্রবর্তী। রাখির উপরে লেখা শব্দগুলির উপরে চোখ যেতে শুভজিৎ বলেন, ‘‘ডেঙ্গির জন্য রাখি পরালে? খুব ভাল।’’ স্বপনবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমাদের মতো ক্ষতি যাতে আর কোনও পরিবারের না হয়, সেটাই চাই।’’ আর মেয়ের কথায়, ‘‘আমাদের মনে রেখে সচেতনতা বাড়লে ভালই তো।’’
বস্তুত ডেঙ্গি সচেতনতায় শোভাবাজার, বাগবাজার, উল্টোডাঙা, টালিগঞ্জ, যাদবপুরের বিভিন্ন এলাকায় রাখি বিলির উদ্যোগ ঘিরে মানুষজনের যে প্রতিক্রিয়া, তাতে অভিভূত শোভাবাজারের ওই বেসরকারি সংস্থার আধিকারিকেরা। সংস্থার তরফে ডি আশিস বলেন, ‘‘রাখি যে এমনও হয়, সেটা দেখেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন অনেকে। তবে উল্টোডাঙা, বাগবাজার, যাদবপুরে যখন অন্যদের পরাবেন বলে কিছু মানুষ রাখি নিয়ে গেলেন, তখন মনে হল ঠিক কর্মসূচিই নিয়েছি।’’ বাগুইআটির সামাজিক সংস্থাটির তরফে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা সোমেশ্বর বাগুই বলেন, ‘‘মশাবাহিত রোগে একটা পরিবার যাতে শেষ না হয়, সেটাই লক্ষ্য।’’
উত্তর শহরতলির অন্য প্রান্তে এ দিন সচেতনতার পাঠে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের বিষয় ছিল হেলমেট। সকাল ১০টা নাগাদ ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফে’র প্রচারে রাখি, ফুল, লাড্ডু নিয়ে নাগেরবাজার মোড়ে হাজির হন ট্র্যাফিক গার্ডের আধিকারিকেরা। দক্ষিণপাড়া থেকে ছেলে ঋদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়কে স্কুটিতে চাপিয়ে অর্জুনপুরের দিকে যাচ্ছিলেন মা ঋতপ্রীতা মুখোপাধ্যায়। স্কুটির লুকিং গ্লাসে হেলমেট থাকলেও দু’জনের কারও হেলমেট নেই। সেই দৃশ্য দেখে স্কুটি দাঁড় করান ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক কর্তা। ছেলের মাথায় হেলমেট নেই। তাঁর হেলমেট থাকলেও পরেননি। মা হয়ে এত সচেতনতার অভাব কেন? পুলিশকর্তার প্রশ্ন শুনে ঋতপ্রীতার জবাব, ‘‘কানে বড় দুল পরেছি। হেলমেট পরলে কান ব্যথা করবে, তাই পরিনি। না হলে হেলমেট ছাড়া স্কুটি চালাই না!’’
ধরা পড়ার পরে অনেকেরই বক্তব্য ছিল, তাড়াহুড়োয় এ দিনই হেলমেট পরা হয়নি। ঘটনাচক্রে সেই তালিকায় ছিলেন বিধাননগর পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রীতা সাহার স্বামী তথা রাজারহাট-গোপালপুর বিধানসভার সহ-সভাপতি বাপি সাহাও। হেলমেটহীন তৃণমূল নেতার সারথি গোপালকে পাকড়াও করে এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘ভয়ের কিছু নেই। আজ শুধুই রাখি এবং মিষ্টি।’’ যার প্রেক্ষিতে গোপাল বলেন, ‘‘ভয় কীসের? পিছনে কাউন্সিলরের স্বামী আছেন তো।’’ পুলিশের ‘গাঁধীগিরি’র রাখি পরে বাপিবাবুর ‘অজুহাত’ও সেই তাড়াহুড়ো। তাঁর কথায়, ‘‘অর্জুনপুরে পরপর অনুষ্ঠান করে বাপুজি কলোনি যাচ্ছি। তাড়াহুড়োয় হেলমেট পরা হয়নি!’’