প্রবল গরমে পানীয় জলের চাহিদা বাড়ছে হু হু করে। প্রতীকী ছবি।
প্রবল গরমে পানীয় জলের চাহিদা বাড়ছে হু হু করে। কিন্তু, শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, রাজপথের অধিকাংশ জলসত্রই বিকল হয়ে পড়ে আছে। কয়েকটি জলসত্র আবার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো হওয়ার মুখে। তাই গরমে হন্যে হয়ে ঘুরেও নিখরচায় পানীয় জলের সন্ধান পাচ্ছেন না সাধারণ পথচারীরা। জলসত্রগুলির এমন দুরবস্থার প্রসঙ্গ কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশনে একাধিক বার উত্থাপন করেছেন পুরপ্রতিনিধিরা। যার উত্তরে সেগুলি সারানোর আশ্বাসও দিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, বেশির ভাগ জলসত্রই বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে।
গত বছরের মে মাসে ৮৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি পারমিতা চট্টোপাধ্যায় পুরসভার মাসিক অধিবেশনে জানিয়েছিলেন, তাঁর ওয়ার্ডের অধিকাংশ জলসত্র থেকেই ঠান্ডা জল পাওয়া যায় না। বেশির ভাগেরই দরজা ভাঙা। পারমিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, শহরের কোথায় কত জলসত্র রয়েছে, তার হিসাব রাখা হবে এবং সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক মতো হচ্ছে কি না, তা-ও দেখবেন পুর কর্তৃপক্ষ। মেয়র এই কাজের দায়িত্ব দেন মেয়র পারিষদ (বিজ্ঞাপন) দেবাশিস কুমারকে। কিন্তু অভিযোগ, প্রায় এক বছর পার হতে চললেও শহরের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে থাকা জলসত্রগুলি একই অবস্থায় রয়েছে। পুর অধিবেশনে মেয়র আশ্বাস দিলেও জলসত্রগুলি নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে, এই প্রবল গরমেও সাধারণ মানুষ জলসত্র থেকে ঠান্ডা ও পরিশুদ্ধ পানীয় জল পাচ্ছেন না।
কোথাও জলসত্র বসানো হলে কোনও না কোনও বেসরকারি সংস্থা তাতে বিজ্ঞাপন দেয়। নিয়ম অনুযায়ী, যে সংস্থা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, তাদেরই ওই জলসত্র রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নতুন জলসত্র বসানোর কিছু দিন পর থেকে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি আর সেটির রক্ষণাবেক্ষণ করে না। পুর অধিবেশনে মেয়র জানিয়েছিলেন, যে সমস্ত সংস্থা রক্ষণাবেক্ষণ করবে না, তাদের নাম জলসত্র থেকে মুছে ফেলা হবে। কিন্তু শহরের অধিকাংশ পুরপ্রতিনিধি জানাচ্ছেন, মেয়রের আশ্বাস সত্ত্বেও জলসত্র নিয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ করা হয়নি। ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধি সন্তোষ পাঠকের অভিযোগ, ‘‘ডালহৌসি এলাকায় বহু মানুষ কাজের সূত্রে বাইরে থেকে আসেন। আমার ওয়ার্ডে অফিসপাড়ার ফুটপাতে জলসত্রগুলি দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। পুরসভার মাসিক অধিবেশনে জলসত্র সারানোর দাবি জানালেও আজ পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি। ফলে, গরমে সাধারণ মানুষের কষ্টের শেষ নেই।’’
৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি বিশ্বরূপ দে জানালেন, তাঁর ওয়ার্ডেও একাধিক জলসত্র বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। তাই গরমে পানীয় জল মিলছে না। তিনি বলেন, ‘‘পুর কর্তৃপক্ষ এগুলির সংস্কারের ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।’’ এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মেয়র পারিষদ (বিজ্ঞাপন) দেবাশিস কুমার শুক্রবার বলেন, ‘‘বিকল জলসত্রগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’
কিন্তু, গরমের সময়ে জলসত্রগুলি বন্ধ থাকলে মানুষ পানীয় জল পাবেন কোথায়? বিকল জলসত্র সারানোর কথা ভাবা হচ্ছে না কেন? মেয়র পারিষদ বলেন, ‘‘যে সমস্ত বেসরকারি সংস্থা জলসত্রে বিজ্ঞাপন দেয়, তাদেরই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার কথা। যারা সেই দায়িত্ব নিচ্ছে না, তাদের জলসত্রগুলি বন্ধ করা হচ্ছে। ওই সমস্ত বিকল হওয়া জলসত্র সারানোর দায়িত্ব পুরসভার নয়।’’ পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘জলসত্রগুলিতে যে সমস্ত সংস্থার বিজ্ঞাপন রয়েছে, সেই সংস্থাগুলির কাছে আমরা আবেদন করছি, তারা যেন নিয়ম মতো জলসত্রগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের ব্যবস্থা করে। তা না হলে সাধারণ মানুষ অপরিশোধিত জল পান করতে বাধ্য হবেন।’’