প্রবল গরমে পথচলতি মানুষকে ঠান্ডা জল পান করানোর পাশাপাশি তাঁরা তুলে ধরলেন নিজেদের দাবিও। ফাইল চিত্র।
নির্ধারিত সময় ধরে ধরে কাজের ‘স্লট’ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এক-একটি স্লটে খাওয়ার ও বিশ্রামের সময় রাখা হয়েছে মাত্র ১৫ মিনিট! তীব্র গরমে মোটরবাইকে খাবার বা অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে ছুটে বেড়ান যাঁরা, এইটুকু সময়ে কি তাঁদের কুলোয়? তবে, শুধু বিশ্রামের সময় নিয়েই নয়, বঞ্চনার একাধিক অভিযোগ রয়েছে শহরে মোটরবাইকে সরবরাহের কাজের সঙ্গে যুক্তদের। সোমবার একাধিক দাবি নিয়ে বিশ্রামের ওই ১৫ মিনিট করে সময় দিয়েই এক অভিনব প্রতিবাদ জানালেন তাঁরা। ডানলপ ও দমদমের গোরাবাজার এলাকার দু’জায়গায় দু’টি জলসত্র খুললেন তাঁরা। প্রবল গরমে পথচলতি মানুষকে ঠান্ডা জল পান করানোর পাশাপাশি তুলে ধরলেন নিজেদের দাবিও।
এই প্রতিবাদ আন্দোলনেরই এক জন অরিন্দম রায়। তিনি এ দিন বললেন, ‘‘তীব্র গরমে ছুটে বেড়াতে হয় আমাদের। গ্রীষ্মকালীন বোনাস তো পাই-ই না, উল্টে রোজগারও কমছে। যে টাকা বা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা, তার ধারেকাছেও আমরা পাই না।’’ তিনি বলেন, ‘‘আর্ট পেপারে নিজেদের দাবিগুলো লিখে তাই এ দিন জলসত্র খুলেছিলাম। ছুটি নিয়ে তো আন্দোলন করা যায় না, আইডি ব্লক করে দেওয়া হয়। তাই কাজের মাঝে যে ১৫ মিনিট সময় বিশ্রামের জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেই সময়টুকুতেই যে যার মতো পেরেছি, জলসত্রে উপস্থিত থেকেছি আমরা।’’
এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত অ্যাপ-নির্ভর খাবার সরবরাহ সংস্থার কর্মীরা জানালেন, এখন চার কিলোমিটার পর্যন্ত ন্যূনতম ২৫ টাকা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে সকাল ৬টা থেকে ১২টার মধ্যে কাজ করলে মেলে ৫০ টাকা। বেলা ১২টা থেকে ৪টে পর্যন্ত কাজ করলে পাওয়া যায় ৫৫ টাকা। বিকেল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৭টা অবধি কাজ করলে দেওয়া হয় মাত্র ২৫ টাকা। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা এবং সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত কাজ করলে মেলে যথাক্রমে ৬৫ ও ৩০ টাকা। এর বাইরে আর উপরি নেই! জলসত্রের অন্যতম উদ্যোক্তা ‘ডেলিভারি ভয়েস’-এর তরফে সৌম্য চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ন্যূনতম যেটুকু রোজগার হত, তা তলানিতে। জ্বালানির দামও উঠছে না। কোম্পানি বলছে, আমরা তাদের পার্টনার। কিন্তু লভ্যাংশ দিচ্ছে না। শ্রমিকের মর্যাদাও দেওয়া হচ্ছে না। আমরা তা হলে কারা?’’
‘কলকাতা সাবার্বান বাইক ট্যাক্সি অপারেটর্স ইউনিয়ন’-এর তরফে শান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ এমন এক রাজ্য যেখানে বেশ কয়েকটি বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পান শ্রমিকেরা। কিছু রাজ্যে তা নেই। এই সংস্থাগুলি পার্টনার বা অন্য নামের আড়ালে শ্রমিকদের বঞ্চিত করছে। অবিলম্বে শ্রমিকের মর্যাদা দেওয়া দরকার। নয়তো পার্টনারের প্রাপ্ত লভ্যাংশ দিতে হবে।’’ সূত্রের খবর, বিষয়টি প্রশাসনের কাছে পৌঁছেছে। এই সমস্ত সংস্থায় কর্মী নিয়োগের প্রস্তাবিত চুক্তিপত্রের প্রতিলিপি চেয়ে পাঠানো হচ্ছে। তাতে কি বঞ্চনা কমবে? উত্তর স্পষ্ট হবে কিছু দিনের মধ্যেই।