নিউ আলিপুরে ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার তরুণীর পচাগলা দেহ

এ দিন বিজয়কুমার খাটনানি নামের এক প্রৌঢ় পুলিশে ফোন করে জানান, তাঁর বৌদি নীলম ধানানি (৫০) তাঁকে ফোন করে জানিয়েছেন, তাঁর ভাইঝি আত্মহত্যা করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৫৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

বহুতলের চারতলার ঘর বাইরে থেকে তালাবন্ধ। ভিতরে শোয়ার ঘরের বিছানায় ধোপদুরস্ত জামাকাপড় পরে শুয়ে আছেন এক তরুণী। কিন্তু তাঁর দেহ পচেগলে গিয়েছে। তাতে থিকথিক করছে পোকা। সোমবার বিকেলে নিউ আলিপুরের সাহাপুর কলোনির এক বহুতল থেকে এই অবস্থাতেই বছর ছাব্বিশের এক তরুণীর দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। মৃতার নাম গুড্ডন ধানানি। কী ভাবে ওই তরুণী মারা গিয়েছেন, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন বিজয়কুমার খাটনানি নামের এক প্রৌঢ় পুলিশে ফোন করে জানান, তাঁর বৌদি নীলম ধানানি (৫০) তাঁকে ফোন করে জানিয়েছেন, তাঁর ভাইঝি আত্মহত্যা করেছেন। ওই প্রৌঢ়ই পুলিশকে জানান, নীলম এই মুহূর্তে হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি। বিজয়কুমার জানান, নীলম এ দিন সকালে সাহাপুর কলোনির বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বিহারের কাটিহারে যাবেন বলে। কিন্তু হাওড়া স্টেশনে মাথা ঘুরে পড়ে যান তিনি। রেল পুলিশ তাঁকে হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকেই তিনি ফোনে দেওরকে জানান, গত ২৩ ডিসেম্বর তাঁর মেয়ে গুড্ডন আত্মহত্যা করেছেন। তিনিও আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি।

প্রৌঢ়ের ফোন পেয়ে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ সাহাপুর কলোনিতে পৌঁছয় এবং তালা ভেঙে গুড্ডনের দেহ উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, শোয়ার ঘরের বিছানায় গুড্ডনের দেহে পরিপাটি করে পোশাক পরানো ছিল। পাশে রান্নাঘরে একটি হুক থেকে একটি দড়ি ফাঁস লাগানো অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। মিলেছে একটি ‘সুইসাইড নোট’ও। সেটি গুড্ডনের বলেই তাঁর মায়ের দাবি। তবে পুলিশের অনুমান, চিঠিটি নীলমের লেখা।

Advertisement

ওই তরুণীর দেহ উদ্ধারের পরেই একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশেষ করে তাঁর মা নীলমের বয়ান ঘিরে। নীলম তাঁর দেওর বিজয়কুমারকে ফোনে জানিয়েছেন, গুড্ডন ২৩ তারিখ আত্মহত্যা করেছেন। আর তিনি ওই বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন সোমবার সকালে। তা হলে প্রশ্ন, গত ১৩ দিন ধরে তিনি পুলিশকে কিছু জানাননি কেন? তিনি ছিলেনই বা কোথায়? মৃত মেয়ের সঙ্গে ওই ঘরেই?

গুড্ডনের দেহ উদ্ধারের পরেই তদন্তকারীরা হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে যান। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, নীলমের সেরিব্রাল স্ট্রোক হয়েছে। কিডনিরও সমস্যা ধরা পড়েছে। তাই পুলিশ এখনই তাঁকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। তবে হাসপাতালের তরফে পুলিশকে জানানো হয়েছে, নীলম সোমবার নয়, গত ২৯ ডিসেম্বর সেখানে ভর্তি হয়েছেন। ফলে নীলম তাঁর দেওরকে ফোনে যা যা বলেছেন, তার কতটা সত্যি, তা নিয়ে ধোঁয়াশা বেড়েছে। তাঁর বক্তব্যে যে অসঙ্গতি রয়েছে, তা তাঁর পড়শিদের কথাতেও স্পষ্ট। এ দিন তাঁদের এক পড়শি জানান, গত ১০ দিন ধরে ওই বাড়ি তালাবন্ধ হয়ে রয়েছে। তাঁরা কাউকেই আসতে বা যেতে দেখেননি। গত ৩১ ডিসেম্বর রাত থেকেই তাঁরা দুর্গন্ধ পাচ্ছেন। সকলেই ভেবেছিলেন, আশপাশে কোনও প্রাণী মারা গিয়েছে। পুলিশ আপাতত নীলমের সঙ্গে কথা বলার অপেক্ষায় রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement