এমনই লন্ডভন্ড অবস্থা ছিল ঘরের। রবিবার, খড়দহে। নিজস্ব চিত্র
দিন তিনেক ধরে বাইরে থেকে বন্ধ ছিল ফ্ল্যাটের দরজা। কেউ জানতেন না, নিঃসন্তান দম্পতি কোথায় গিয়েছেন। কিন্তু রবিবার ওই ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ বেরোতে থাকায় প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে দরজা খুলে ঢুকে আর একটি ঘরের তালা ভেঙে উদ্ধার করে ওই দম্পতির পচাগলা দেহ।
ঘটনাটি ঘটেছে খড়দহ থানার পানশিলায়। পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন সৌমিত্র মুখোপাধ্যায় (৫৫) ওরফে রতন এবং তাঁর স্ত্রী উমা মুখোপাধ্যায় (৫০)। আবাসন কিংবা পাড়া, কোথাওই বিশেষ মেলামেশা ছিল না ওই দম্পতির। ব্যারাকপুরের ডেপুটি কমিশনার (জোন-২) আনন্দ রায় বলেন, ‘‘দেহটি পচে পোকা ধরে গিয়েছিল। কী ভাবে দম্পতির মৃত্যু হল, তা ময়না-তদন্তের পরেই বোঝা যাবে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, পানশিলার আর এন অ্যাভিনিউয়ের পশুপতি আবাসনের দোতলার ফ্ল্যাটে কয়েক বছর ধরে থাকতেন ওই দম্পতি। সৌমিত্রবাবু বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেন। উমাদেবী ফ্ল্যাটে থাকলেও কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। ওই আবাসনের বাসিন্দা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গত তিন দিন ধরে সৌমিত্রবাবুদের ফ্ল্যাটের দরজায় বাইরে থেকে হ্যাচবোল্ট লাগানো ছিল। বাইরে পড়ে থাকছিল খবরের কাগজও। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘দু’দিন ধরে সামান্য পচা গন্ধ পাচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম, কোথাও ইঁদুর মরেছে। কিন্তু রবিবার সকাল থেকে দুর্গন্ধে টেকা যাচ্ছিল না।’’ বন্ধ ঘর থেকে কেন পচা গন্ধ বেরোচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ হয় বাসিন্দাদের।
এর পরেই তাঁরা পাড়া উন্নয়ন কমিটিকে বিষয়টি জানান। কমিটির তরফে নিমাই বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা এসে দেখি, তীব্র দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। খবর পেয়ে আসে পুলিশ।’’ সৌমিত্রবাবুর ফ্ল্যাটের দরজার হ্যাচবোল্ট খুলে ঢুকে তদন্তকারীরা দেখেন, ভিতরের আর একটি ঘরে তালা ঝুলছে। সেখান থেকেই বেশি গন্ধ আসছে। তালা ভেঙে ঢুকে পুলিশ দেখে, ঘরের বিছানা থেকে শুরু করে আলমারি, শো-কেস সব লন্ডভন্ড। খাটে ছড়ানো রয়েছে বিভিন্ন জিনিস। আর মেঝেতে পড়ে আছে দম্পতির পচাগলা দেহ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, সৌমিত্রবাবু ও উমাদেবীকে খুনের পরে ঘরের জিনিসপত্র ঘাঁটা হয়েছে। তবে কী কী জিনিস খোয়া গিয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আর দেহে পচনের মাত্রা এতই বেশি যে, কোনও আঘাতের চিহ্নও বোঝা যাচ্ছে না।
পুলিশ সূত্রের খবর, স্থানীয়েরাও কেউ কখনও তেমন ভাবে কাউকে ওই দম্পতির ফ্ল্যাটে আসতে দেখেননি। তা হলে কে বা কারা এই ঘটনায়
জড়িত, কী ভাবেই বা দম্পতির মৃত্যু হল— তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। আবার লুট করার উদ্দেশ্যে এসে বাধা পেয়ে ওই খুন, না বিষয়টি অন্য দিকে ঘোরাতে ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘরের জিনিস লন্ডভন্ড করা হয়েছে, তা-ও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।