বাদশা মৈত্র ও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্য়ায়। ফাইল চিত্র।
বুদ্ধিজীবীরা বাঘের মতো বিপন্ন। অন্তত দুনিয়া জুড়ে রাজনৈতিক আবহাওয়া তাঁদের পক্ষে খুব স্বাস্থ্যকর ঠেকছে না। হৃদ্রোগ চিকিৎসক এবং সঞ্চালক কুণাল সরকার বিতর্কের শুরুতেই এমন একটা পর্যবেক্ষণ ভাসিয়ে দিয়েছিলেন।
বুধবার সন্ধ্যা। ‘বুদ্ধিজীবীরা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর, তাঁদের থেকে দূরে থাকুন’— বিতর্ক আসরে এই মতের পক্ষে, ফ্যাশন ডিজ়াইনার তথা বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল, অধুনা তৃণমূল শিবিরভুক্ত, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিনেতা এবং বাম সমর্থক বলে পরিচিত বাদশা মৈত্র এবং বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। প্রত্যাশিত ভাবেই পক্ষপাতদুষ্ট, একপেশে এবং অভিসন্ধিমূলক প্রতিবাদের জন্যই তাঁরা ‘বুদ্ধিজীবী’দের উদ্দেশে তোপ দাগলেন।
বিরুদ্ধে বলতে উঠে এই ধারণা আদতে শাসকের বলে নস্যাৎ করে দেন চলচ্চিত্রবিদ্যার শিক্ষক, প্রাবন্ধিক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের কণ্ঠরোধ করার নমুনাও তিনি মেলে ধরেন। সাংবাদিক চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের মতে, ‘বুদ্ধিজীবী’রা যন্ত্রণাদায়ক ইঞ্জেকশনের মতো। ছোটরা কখনওই তার উপকারিতা বোঝে না।
রবীন্দ্রনাথ, নেরুদা বা রামকিঙ্কর বেজও কি বুদ্ধিজীবী? সমান্তরালে এই তর্কও ঘনিয়ে ওঠে। সভার মতের বিরুদ্ধে থাকা, পর্যায়ক্রমে বাম ও মমতা-শিবিরের ঘনিষ্ঠ কবি সুবোধ সরকার বললেন, ‘‘১০০ বছর না হলে কাউকেই মহাপুরুষ বলা যায় না! রবীন্দ্রনাথও তাঁর সময়ে বুদ্ধিজীবীই ছিলেন।’’
বুদ্ধিজীবীদের অবক্ষয় নিয়ে সরব অগ্নিমিত্রা-জয়প্রকাশেরা। ‘অনুপ্রেরণা’য় যাঁরা মেতে আছেন, তাঁরা আবার কেমন বুদ্ধিজীবী? বাদশার অভিযোগ, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে শিল্প-বিরোধী বুদ্ধিজীবীরাই মানুষকে ভুল বুঝিয়েছেন। বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ করলেই অমুক সময়ে তাঁরা কী করছিলেন ধুয়ো তুললে কিন্তু কোথাও পৌঁছনো যাবে না! পাল্টা প্রতিরোধে সভার মতের বিরুদ্ধ-শিবির। সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদারের কথায়, ‘‘বুদ্ধিজীবীরাই সমাজকে প্রশ্ন করতে শেখায়! ৩৭০ নিয়ে মাতামাতিতে অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে দৃষ্টি ঘোরানো চলছে। তখন বুদ্ধিজীবীরাই স্বাধীন স্বর।’’
ক্যালকাটা ডিবেটিং সার্কলের সদস্য ও শ্রোতারা অবশ্য সভার মতেই আস্থা রেখেছেন। ধ্বনিভোটে ও হাত তুলে স্পষ্ট ভাবে বুদ্ধিজীবী-বিমুখতাই ফুটে উঠেছে।