দেবাঞ্জন দেব ফাইল চিত্র
প্রকাশনা সংস্থার অফিসের জায়গায় ভাড়াটে হিসেবে কলকাতা পুরসভার ভুয়ো অফিস খুলে বসেছিল দেবাঞ্জন দেব। সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে দেবাঞ্জনের কী সম্পর্ক, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। সেটির মালিক অশোককুমার রায় নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ওই প্রকাশনা সংস্থা একই নামে দৈনিক বাংলা ও ইংরেজি সংবাদপত্র এবং মাসিক পত্রিকা বার করে। গত জানুয়ারিতে দেবাঞ্জনকে নিয়ে একটি খবরও প্রকাশিত হয়েছিল সেখানে। যদিও পত্রিকার এক কর্তার দাবি, এই ঘটনায় তাঁরা ফেঁসে গিয়েছেন। এমনকি ওই অফিসে যে প্রতিষেধক শিবিরের আয়োজন করেছিল দেবাঞ্জন, সেখানে ওই প্রকাশনা সংস্থার কর্মীরাও প্রতিষেধক নিয়েছেন। যা নিয়ে অন্যদের মতো তাঁরাও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ওই কর্তার বক্তব্য, ‘‘আমরা দেবাঞ্জনকে বিশ্বাস করেছিলাম। কপালে দুর্ভোগ ছিল বলেই হয়তো এমন হল।’’ তবে কিসের ভিত্তিতে দেবাঞ্জন সংক্রান্ত খবর পর্যন্ত ছাপানো হল, তার ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১০ নাগাদ কসবার শান্তিপল্লিতে সংশ্লিষ্ট বিল্ডিংয়ে নিজেদের সদর দফতর খুলেছিল প্রকাশনা সংস্থাটি। বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলটি অশোকবাবুর কেনা। ২০২০-র সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানেই ছিল প্রকাশনা সংস্থার অফিস। সেপ্টেম্বরে শোভাবাজারে অফিস স্থানান্তরের সময়ে অশোকবাবু সেটি দেবাঞ্জনকে ভাড়া দেন। যদিও কলকাতা পুরসভার নথিতে অফিসটি এখনও ‘অফিস অব পাবলিকেশন’ নামেই নথিভুক্ত রয়েছে। কিন্তু প্রকাশনা সংস্থার অফিস হিসেবে নথিভুক্ত থাকা সত্ত্বেও রাতারাতি ওখানে পুরসভার অফিস খোলা হল, তা-ও আবার পুরসভার পদস্থ এক কর্তার অফিস, অথচ তা নিয়ে কারও কোনও সন্দেহ হল না? এমনকি, কোন ‘জাদুবলে’ সেই খবর পুরসভা-পুলিশের কাছে পৌঁছল না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
প্রকাশনা সংস্থার ওই কর্তার অবশ্য দাবি, তাঁরা সরাসরি দেবাঞ্জনকে চিনতেন না। তাঁদের সঙ্গে দেবাঞ্জনের পরিচয় কসবারই এক দালালের সূত্রে। তিনিই দেবাঞ্জনকে অশোক রায়ের কাছে এনেছিলেন। ওই কর্তার বক্তব্য, ‘‘অফিস শোভাবাজারে সরানোর আগে ভাড়াটে খোঁজা হচ্ছিল। সেই সূত্রেই সঞ্জীব নস্কর নামে এক দালালের সঙ্গে পরিচয় হয়। সঞ্জীবই আমাদের কাছে নিয়ে আসে দেবাঞ্জনকে। দেবাঞ্জন সম্পর্কে সঞ্জীব আমাদের থেকে অনেক বেশি ভাল জানে।’’ যাঁর নাম এ ক্ষেত্রে উঠে আসছে, সেই সঞ্জীববাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো বিষয়টি বলা হলে তিনি অবাক হয়ে যান। তাঁর আবার বক্তব্য, অশোকবাবু তাঁকে এক জন ভাড়াটে খুঁজে দেওয়ার কথা বলেছিলেন ঠিকই। সেই মতো তিনি খোঁজ-খবর শুরু করেন। তখন এক জন পরিচিতের মাধ্যমে তিনি দেবাঞ্জনের খোঁজ পান। এ-ও জানতে পারেন, ওই অফিসটি ভাড়া নিতে চায় সে। সেই কথা গিয়ে বলার পরে অশোকবাবু দেবাঞ্জনকে অফিস ভাড়া দিতে রাজি হয়ে যান। তার পরেই শান্তিপল্লির ঠিকানায় ভাড়াটে হিসেবে প্রবেশ ঘটে ওই যুবকের! সঞ্জীববাবুর দাবি, জমি-জায়গার দালালির সুবাদে তিনি এ রকম লেনদেন করেই থাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘যে কেউ বললেই আমরা ভাড়াটে খুঁজে দিই বা সম্পত্তি বিক্রি করিয়ে দিই। দুই পার্টির মধ্যে বাকি লেনদেন হয়। আমি নিজের কমিশন নিয়ে চলে আসি। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে।’’ কিন্তু ভাড়াটে হিসেবে কে ভাড়া নিচ্ছেন, তাঁর কী পরিচয়— সে সব জানতে চেয়েছিলেন? এই প্রশ্নের অবশ্য সদুত্তর দিতে পারেননি সঞ্জীববাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুলিশকে আমি সব রকম ভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত।’’
যদিও প্রকাশনা সংস্থার পাল্টা দাবি, সঞ্জীববাবু অনেক তথ্য চেপে যাচ্ছেন। তিনি আরও অনেক কিছু জানেন, যা প্রকাশ্যে আনছেন না। এই দাবি-পাল্টা দাবির মধ্যে আরও ঘনীভূত হচ্ছে দেবাঞ্জন-রহস্য।