—প্রতীকী চিত্র।
উৎসবের শহরে আটকানো গেল না পথ দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যু। গত বছরের তুলনায় দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। পুজোর পাঁচ দিনে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা যেমন ঘটেছে, তেমনই আহত হয়েছেন অনেকে। শহরের রাস্তায় উৎসবের ক’দিন কড়া পুলিশি ব্যবস্থা থাকলেও একাধিক দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুর জেরে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে বন্ধ করা যাবে উৎসবের নামে বেপরোয়া যাপন?
লালবাজার সূত্রের খবর, পঞ্চমীর রাত থেকে দশমীর মধ্যে শহরে ২০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন প্রায় ২৯ জন। এমনকি, মৃত্যুও হয়েছে এক যুবকের। সব চেয়ে বেশি দুর্ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে সপ্তমীর দিন। ওই দিন নথিভুক্ত ছ’টি দুর্ঘটনায় মোট আট জন আহত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক জনের। গত শুক্রবার রাত আড়াইটে নাগাদ সার্ভে পার্ক থানা এলাকার বড়খোলা রোড ধরে মোটরবাইকে তিন জন বেপরোয়া গতিতে যাচ্ছিলেন। তখনই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইকটি রাস্তার পাশে ধাক্কা মারে। গুরুতর আহত অবস্থায় তিন জনকে ইএম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা ধীরাজ মুখোপাধ্যায় নামে বছর বাইশের এক যুবককে মৃত বলে জানান। কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দুর্ঘটনা ঘটেছে পুজোর বাকি দিনগুলিতেও। যদিও গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রাণহানি কমেছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর পুজোর পাঁচ দিনে শহরে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন প্রায় ১৫ জন। এ বছরে আহতের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হলেও মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটা কমানো গিয়েছে বলে লালবাজারের দাবি।
তবে উৎসবের নামে শহরে বেপরোয়া যাপন বজায় ছিল এ বছরেও। গত বছরের তুলনায় রাস্তায় পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়েও যা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। বিনা হেলমেটে বাইক চালানোর ঘটনা যেমন ঘটেছে, তেমনই অতিরিক্ত গতিতে, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো, বাইকে একাধিক জনকে বসিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা নজরে পড়েছে। রাত যত বেড়েছে, ততই বেপরোয়া হয়েছে পথের বিধি ভাঙার প্রবণতা। একাধিক জায়গায় পুলিশের সামনেই বিধি-ভঙ্গের ঘটনা ঘটলেও কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। ই এম বাইপাস, ডায়মন্ড হারবার রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড-সহ শহরের একাধিক রাস্তায় উৎসবের রাতগুলিতে দেদার বেপরোয়া গাড়ির দাপটের দেখা মিলেছে। বাইপাসে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘রাত হলে উৎসবের নামে বাইক থেকে শুরু করে গাড়ি এমন ভাবে যাতায়াত করে যে, দেখেও কিছু করার থাকে না। সামনে গিয়ে থামাতে গেলেই বিপদ।’’
যদিও লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘এ বছর যথেষ্ট সক্রিয় ছিল পুলিশ। বিধিভঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে আইন অনুযায়ী। পথের বিধি ভাঙার জন্য ক্যামেরার সাহায্য নিয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’ লালবাজারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৮ থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৮৭৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৬৭৭ জনের বিরুদ্ধে। বিনা হেলমেটে বাইক চালানোর জন্য ৩৪২৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।