মর্গের সামনে রাজকুমার সাউয়ের পরিবার।—নিজস্ব চিত্র
খাস কলকাতার সিঁথি থানায় পুলিশি হেফাজতে ব্যবসায়ী মৃত্যুর ঘটনায় দুই সাব ইনস্পেক্টর এবং এক সার্জেন্টের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করলেন মৃতের ভাই রাকেশ সাউ। দুই সাব ইনস্পেক্টর অরিন্দম দাস, সৌমেন্দ্রনাথ দাস এবং সিঁথি থানার সার্জেন্ট চিন্ময় মহন্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৬৬, ১৬৬-এ, ৩৩০, ৩৪২, ৩৪৮, ৩০৪ এবং ৩৪ ধারায় ওই এফআইআর করা হয়েছে।
পুলিশি হেফাজতে এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু ঘিরে সোমবার রাতেই উত্তাল হয়ে উঠল সিঁথি এলাকা। মৃত ব্যক্তির নাম রাজকুমার সাউ (৫৪)। পাইকপাড়া এলাকার বাসিন্দা তিনি। রাজা মণীন্দ্র রোডে পুরনো লোহা এবং কাগজ কেনাবেচার ব্যবসা চালাতেন।
রাজকুমার সাউয়ের বড় ছেলে অজয় সাউয়ের অভিযোগ, একটি চুরির তদন্তে জেরা করার জন্য, রাত ১১টা নাগাদ তাঁর বাবাকে থানায় নিয়ে যায় সিঁথি থানার পুলিশ। পুলিশ জানায়, রাজকুমার চোরাই জিনিস কিনেছেন। সেখানে নিয়ে গিয়ে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন রাজকুমার। এমনটাই অভিযোগ।
আরও পড়ুন:বিপুল জয়ের পর দিল্লিবাসীর উদ্দেশে কেজরীবালের বার্তা
আরও পড়ুন:গণধর্ষণ কাণ্ডে ধৃতদের জেল হেফাজত
অভিযোগ, থানায় রাজকুমারের পরিবারের লোকজন উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও, তাঁদের না জানিয়েই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। কোনওরকমে বিষয়টি তাঁদের চোখে পড়ে যায়। যার পর পুলিশের গাড়িতে রাজকুমারকে তুলে নিয়ে হাসপাতাল পৌঁছন তাঁরা। কিন্তু সেখানে রাজকুমারকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। এর পরেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। সিঁথি থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান মৃতের আত্মীয়-পরিজনেরা। গভীর রাত পর্যন্ত থানার ভিতরে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধুন্ধুমার চলে।
মঙ্গলবার সকালে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের মর্গে বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে রাজকুমারের ময়নাতদন্ত হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনেই রাজকুমারের ছোট ছেলে বিজয় সাউয়ের বয়ানও রেকর্ড করা হয়। শিয়ালদহ আদালতের বিচারক হরিপদ হাজরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বয়ান পর্ব এবং ময়নাতদন্ত— দুটো ঘটনারই ভিডিয়ো রেকর্ডিং করা হয়েছে।
অন্য দিকে, এ দিন কলকাতা হাইকোর্টেও পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চেয়ে মামলা করা হয়। এ নিয়ে আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে কলকাতা পুলিশকে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। কীভাবে গোটা ঘটনাটা ঘটল, ময়নাতদন্ত হল কী ভাবে, পুলিশের তরফে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, রিপোর্টে তা সবিস্তারে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
তবে রাজকুমার সাউয়ের মৃত্যু ঘিরে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। এই ঘটনার জেরে গতকাল রাতেই সিঁথি থানায় তৃণমূল এবং বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে ধস্তাধস্তি এবং মারামারি হয়। মৃতকে নিজেদের সদস্য বলে দাবি করে বিজেপি। অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদর শাস্তির দাবিতে এ দিন বাগবাজার মোড় থেকে সিঁথি থানা পর্যন্ত মিছিলের কর্মসূচিও ছিল তাদের। কিন্তু বাগবাজারেই সেই মিছিল আটকে দেয় পুলিশ।