অবশেষ: প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে ভেঙে পড়া গাছ সরানো হচ্ছে ক্রেনের সাহায্যে। নিজস্ব চিত্র
বছর তিনেক আগে সেনার সঙ্গে গাছযুদ্ধে নেমেছিল কলকাতা পুরসভা। শহরের সবুজ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর এলাকায় গাছ বসানোর অনুমতি চেয়েছিল তারা। কিন্তু সেনা তা নাকচ করে দেয়। পুরসভা যেখানে কয়েক হাজার গাছ বসাতে চেয়েছিল, সেখানে বসানো গিয়েছিল মাত্র কয়েকশো গাছ। তবে এ বার আর গাছ বসানো নয়, বরং আমপানে উপড়ে পড়া গাছ কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে সেনা-পুরসভার ‘মতবিরোধ’ তৈরি হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রাথমিক ভাবে পাঁচ হাজার বলা হলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ১৫ হাজারেরও বেশি গাছ পড়েছে ঝড়ে। আর সেখানেই বিপত্তির শুরু বলে তাঁদের অভিমত। কারণ, উপড়ে যাওয়া এত গাছ কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে রীতিমতো ধন্দে পড়ে গিয়েছেন পুরকর্তারা। কোনও মতে ভেবেচিন্তে যে জায়গা তাঁরা বার করেছিলেন, তা-ও বাতিল হয়ে গিয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, বাবুঘাটের কাছে গঙ্গাসাগর মেলার সময়ে যেখানে পুণ্যার্থীরা থাকেন, উপড়ে পড়া গাছ সেখানেই স্তূপীকৃত করে রাখা হবে। তার পরে সময়-সুযোগ বুঝে সেগুলিকে ধাপায় নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবব্রত মজুমদার বলছেন, ‘‘সেনার কাছ থেকে সেই অনুমতি পাওয়া যায়নি। ফলে যে যে এলাকায় গাছ পড়েছে, সেখানেই স্থানীয় ভাবে তা জড়ো করে রাখা হচ্ছে।’’ এ বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে সেনাবাহিনীর তরফে অবশ্য কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
পুরকর্তাদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, আমপানের তাণ্ডবের মাত্রা বেশি হওয়ায় উপড়ে পড়া গাছের সংখ্যাও বেশি। কিন্তু প্রতি বছরই কালবৈশাখী বা এমনি ঝড়ে
উপড়ে যাওয়া গাছ কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে রীতিমতো সংশয়ে পড়তে হয় তাঁদের। কারণ, উপড়ে পড়া গাছ নিলাম করে বিক্রির ব্যবস্থা অতীতে থাকলেও বর্তমানে তা আর নেই। এই গাছ কেউই নিতে চান না। উল্টে গাছ এবং ডালপালা লরিতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে ভাঁড়ার থেকে টাকা বেরিয়ে যায় পুরসভার। আমপানের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি হচ্ছে। কারণ এ ক্ষেত্রে উপড়ে যাওয়া গাছের সংখ্যা অনেক বেশি। তবে মেহগনির মতো মূল্যবান কিছু গাছ নিলামে তোলার কথা ভাবা হচ্ছে। দেবব্রতবাবুর কথায়, ‘‘প্রতিদিন গড়ে ১০০টি লরি কাজ করছে। অনেক ক্ষেত্রে তো ট্রিপপিছু দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে পুরসভার। এখনও পর্যন্ত গাছ সরাতে মোট কত খরচ হয়েছে, রীতিমতো হিসেব করে বলতে হবে।’’
এত গাছ পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে উদ্ভিদবিজ্ঞানী মানস ভৌমিক বলছেন, ‘‘শহরে যে সব গাছ রয়েছে, সেগুলির শিকড় মাটির গভীর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। তা থেকে যায় মাটির উপরিভাগেই।’’ উদ্ভিদবিদ অশোক আগরওয়ালের মতে, ‘‘নিম গাছের মতো গাছ শহরে লাগানো হলে ঝড়ের সময়ে বিপদের আশঙ্কা কম থাকে।’’
কিন্তু বাস্তব হল, বছর বছর ঝড় আসে আর তাতে গাছের পর গাছ উপড়ে পড়ে। তার পরে নিয়ম মতো নতুন গাছ-নীতির কথা ঘোষণাও করে পুরসভা। যেমন এ বারও করেছে। কিন্তু সেই নীতি বাস্তবায়িত হওয়ার আগে ফের আরও একটা ঝড় শহরের বুকে কোনও মতে টিকে থাকা সবুজ ধ্বংস করে চলে যায়। আমপানেও যার ব্যতিক্রম হয়নি!