উড়ন্ত: ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে উড়ছে ফুটপাতের দোকানের ত্রিপল। —নিজস্ব চিত্র
বিকেল ৪টে নাগাদ শুরু হয়েছিল ঝড়ের তাণ্ডব। যার জেরে লন্ডভন্ড হয়ে গেল গোটা হাওড়া শহর। প্রবল হাওয়ায় নিজেদেরই বাড়ির টিনের চাল ভেঙে পড়ায় প্রাণ গেল ১৩ বছরের এক কিশোরীর। গাছ পড়ে, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে, বাড়ির চাল উড়ে গিয়ে বিপর্যস্ত হল জনজীবন। রাত পর্যন্ত ঝড়ের তাণ্ডব এতটাই ছিল যে, ক্ষয়ক্ষতির খবর পেয়েও পুলিশ বা পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী পৌঁছতে পারেনি।
আমপানের জন্য হাওড়া পুরসভা সব রকম প্রস্তুতি নিলেও শহরের উপর দিয়ে এ দিন যে গতিতে এবং যত ক্ষণ ধরে ঝড় বয়ে গিয়েছে, সাম্প্রতিক অতীতে তেমন কোনও উদাহরণ হাওড়ার বাসিন্দাদের কাছে নেই। আমপান যখন কলকাতা থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে, তখনই কার্যত ধ্বংসলীলা শুরু হয়ে যায় হাওড়ায়। সব থেকে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে বটানিক্যাল গার্ডেন থানা এলাকার রাজকিশোর রায়চৌধুরী লেনে। পুলিশ জানায়, ঝড়ের দাপটে নিজেদের ঘরের টিনের চাল চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় লক্ষ্মীকুমারী সাউ নামে ১৩ বছরের এক কিশোরীর। কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে যান ওই বালিকার বাবা-মা। ওই ঘটনার পরেও ঝড়ের গতি এতটাই বেশি ছিল যে, খবর পেয়ে পুলিশও প্রথমে সেখানে পৌঁছতে পারেনি। পরে মধ্য হাওড়ার বিধায়ক ও রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় ঘটনাটি পুলিশ ও পুরসভাকে জানালে প্রবল ঝড়ের মধ্যেই মৃতদেহ উদ্ধার করে পরিবারটিকে অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
প্রায় চার ঘণ্টা ধরে প্রবল বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ঝড়ের তাণ্ডবের জেরে বিদ্যুৎ চলে যায় হাওড়া শহরের অধিকাংশ জায়গায়। সিইএসসি সূত্রে জানা গিয়েছে, বালি থেকে দক্ষিণ হাওড়ায় তারের উপরে গাছ পড়ে এবং খুঁটি উপড়ে বহু এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যায়। গঙ্গায় জলোচ্ছ্বাসের জেরে ঢেউয়ের উচ্চতা হাওড়া ফেরিঘাটের সব থেকে উঁচু জেটিকেও ছাপিয়ে যায়। দুপুরের পরে বন্ধ করে দেওয়া হয় হাওড়া সেতু ও বিদ্যাসাগর সেতু। ফোরশোর রোডের পাশে একটি আবাসনের ২০ ফুট উঁচু পাঁচিল ভেঙে পড়ে। কালীবাবুর বাজারের কাছে একটি মন্দির লাগোয়া বটগাছ উপড়ে রাস্তায় গিয়ে পড়ে। জিসিআরসি ঘাটের কাছে একটি বাড়ির চাল উড়ে যায়। একই অবস্থা হয় কোনা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে জানা গেটের কাছে। সেখানেও তিনটি বাড়ির চাল উড়ে যায়।
এ দিকে, সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় হাওড়ার অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা ও রাস্তাগুলিতে জল জমে যায়। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাস্তায় নামেন সমবায়মন্ত্রী। প্রাক্তন মেয়র পারিষদ বিভাস হাজরা ঝড়ের আগেই বেনারস রোড, বামনগাছি, বিএনআর কোয়ার্টার্স থেকে ৫০০ জন বাসিন্দাকে বিভিন্ন স্কুল ও ক্লাবে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।