পূর্বাভাস: মঙ্গলবার বিকেল থেকেই শহরে শুরু হয়েছে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি। ভিআইপি রোডে। ছবি: সুমন বল্লভ
ঘণ্টায় প্রায় ৭০ কিলোমিটার বেগে আসা ঘূর্ণিঝড় আয়লায় ২০০৯ সালে তছনছ হয়েছিল কলকাতা। ভেঙে পড়েছিল হাজারখানেক গাছ। ১১ বছর পরে এ বার ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সুপার সাইক্লোন আমপানের। যার ক্ষয়ক্ষতি ঘিরে চিন্তায় পড়েছে পুলিশ ও পুর প্রশাসন। দুই দফতরই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে শহরকে নিরাপদে রাখতে। আজ, বুধবার আছড়ে পড়ার কথা আমপানের। লালবাজার ও পুর ভবন এবং কলকাতা পুলিশের প্রতিটি ডিভিশনেই খোলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার বিশেষ কন্ট্রোল রুম।
পুরকর্তাদের আশঙ্কা, শিকড় আলগা থাকায় ফুটপাতের বহু গাছ ঝড়ে উপড়ে যেতে পারে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে হাইমাস্ট আলোর বাতিস্তম্ভগুলিও। বৃষ্টির জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় সমস্ত ত্রিফলা আলোও নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম আগাম প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার দফায় দফায় পুর আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি জানান, ত্রিফলার বিদ্যুৎসংযোগ নেওয়া হয় ফিডার বক্স থেকে। সেখানে জলে তড়িদাহত হওয়ার আশঙ্কায় ফিডার বক্সের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।
জল জমার সমস্যা থাকায় গার্ডেনরিচ এলাকার বেশ কিছু রাস্তার তালিকা সিইএসসি-কে দেওয়া আছে। ওই সব রাস্তায় ফিডার বক্সে জল ঢোকার আগেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে বলা হয়েছে সিইএসসি-কে। ফিরহাদ জানান, মধ্য ও উত্তর কলকাতার বিপজ্জনক বাড়িগুলির অনেক বাসিন্দাকে সরানো হয়েছে। অনেককে সরে যেতে বলা হচ্ছে। এ নিয়ে মাইকে প্রচারও করেছে প্রশাসন।
আরও পড়ুন: অক্টোবর ছেড়ে আপাতত মে-তে নজর ঘূর্ণিঝড়ের
ভেঙে পড়া গাছ দ্রুত কী ভাবে সরানো যায় তা নিয়ে এ দিন পুলিশ ও পুরসভার মধ্যে আলোচনা হয়েছে। কলকাতার পার্ক ও উদ্যান দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমার জানান, উঁচুতে থাকা ফ্লেক্স, হোর্ডিং নামানোর কাজ চলছে। তিনি জানান, স্বয়ংক্রিয় মই, ক্রেন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিটি বরোয় দু`টি করে র্যাপিড অ্যাকশন টিম ছাড়াও একটি করে বিশেষ দল তৈরি থাকবে। প্রয়োজন মতো তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ কেটে ফেলবে। প্রস্তুত থাকবেন জঞ্জাল অপসারণ দফতরের কর্মীরাও।
আরও পড়ুন: পুরীর মন্দিরে পান্ডাদের ফোন করছেন ভক্তরা
ঝড়ের মোকাবিলায় আজ, বুধবার সারা রাতই পুর ভবনে থাকবেন পুর কর্তারা। ইতিমধ্যেই কলকাতার ১৬টি বরোয় ২৪ ঘণ্টার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পুর ভবনে প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যানের ঘরে বসেছে আমপানের বয়ে চলার সময়ে শহরের হাল জানার বিশেষ যন্ত্র।
লালবাজার জানিয়েছে, বিপর্যয়ের মোকাবিলায় প্রতিটি থানা ও ট্র্যাফিক গার্ডের কর্মীদের বুধবার এবং বৃহস্পতিবার অফিসে থাকতে বলা হয়েছে। প্রতিটি গার্ডেই দু’-চারটি দল থাকবে গাছ কেটে যান চলাচলের ব্যবস্থা করার জন্য। দ্রুত উদ্ধারকাজের জন্য পুলিশ ট্রেনিং স্কুল ছাড়াও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ন’টি বিশেষ দলকে কলকাতা পুলিশের ন’টি ডিভিশনে রাখা হবে। একই কাজের জন্য প্রতিটি ডিভিশনে অতিরিক্ত ৩৫ জনের একটি বাহিনীও প্রস্তুত থাকবে।
আমপানের মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে এ দিন কার্যত গোটা বাহিনীর সঙ্গেই ভিডিয়ো কনফারেন্স করেছেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। সেখানে তিনি সবাইকে সতর্ক করে জানিয়েছেন, ঝড়ের সময়ে রাস্তায় থাকা পুলিশকর্মীরা কেউ যেন গাছের তলায় না থাকেন। বুধবার শহরবাসীকে না-বেরোনোর অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ঝড়ের পরে দুর্গতদের জন্য স্কুল কিংবা কলেজে আশ্রয় শিবির তৈরির পরিকল্পনাও করা হয়েছে। আয়লার পরে পুলিশের নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ বার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মোবাইলও ঠিক রাখতে বলা হয়েছে। গঙ্গায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় পার্শ্ববর্তী বস্তির বাসিন্দাদেরও অন্যত্র সরানোর পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন।