অসহায়: আমপানের তাণ্ডবে তপসিয়া বস্তিতে গৃহহীন বহু পরিবার। কিন্তু বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনও ত্রাণ পৌঁছয়নি এখানে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ঝড়ে বাড়ির ছাদ উড়ে গিয়েছে। হঠাৎ খসে পড়ল এক পাশের ইটের দেওয়াল। আর ঝুঁকি নেননি প্রতিমা হালদার। বুধবার রাতে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নেন দমদম ঘুঘুডাঙার ভারতী বিদ্যামন্দিরে। মধ্যবয়সি ওই মহিলার কথায়, ‘‘গাছের ডাল ভেঙে পড়ছিল। বৃষ্টির মধ্যে কী ভাবে যে স্কুলে ঢুকেছি তা ভগবানই জানেন।’’ বৃহস্পতিবার দেখা গেল, ত্রাণশিবিরের ঘরগুলিতে ঠাসাঠাসি ভিড়। জায়গা মিলবে না, সেই আশঙ্কায় কেউ আগেভাগে বেঞ্চ পেতে নিজের জায়গাটুকু দখলে রাখছেন। কেউ আবার মেঝেতেই সংসার পাতছেন। কাজের ফাঁকে প্রতিমা বলেন, ‘‘আমার মেয়ে এই স্কুলেই পড়েছে। মেয়ের স্কুলেই যে আশ্রয় নিতে হবে ভািবনি।’’
তবে শিবিরে মাস্ক, সানিটাইজ়ারের বালাই নেই। সামাজিক দূরত্ব-বিধিও উধাও। ত্রাণশিবিরে বসে স্বপ্না বিশ্বাস নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘বাড়ি ছেড়ে যখন ঊর্ধ্বশ্বাসে বেরিয়ে এসেছি, তখন করোনার কথা মাথায় ছিল না। করোনা হলে তো চিকিৎসার সুযোগ পাব। কিন্তু আগে তো প্রাণে বাঁচি।’’
আমপানের কারণে বৃষ্টিতে বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ দমদম পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড, এমসি গার্ডেন, পূর্ব সিঁথি, বিধান কলোনিতে জমেছে জল। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, গাছ উপড়ে এখনও বিদ্যুৎহীন অনেক এলাকা। কিছু রাস্তাও বন্ধ। এ দিন দমদমের বিধায়ক তথা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, জলমগ্ন এলাকায় খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির।
এ দিন দমদমের ওই স্কুলের ত্রাণশিবিরে খাবার বিলি করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ভাত ও সয়াবিনের তরকারি নিতে নিতে গৌতমী দাস বলেন, ‘‘কবে যে সব কিছু ঠিক হবে! আর বৃষ্টি হলেই সব শেষ।’’
বৃষ্টি যেন না হয়, এখন সেই প্রার্থনাই করছে গোটা ত্রাণশিবির।