Cyclone amphan

অনেক এলাকাতেই ফিরল বিদ্যুৎ, তবে পুরো ছন্দে ফেরেনি কলকাতা

শনিবার বিকেল থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে উপড়ে থাকা গাছ কেটে পরিষ্কার করার কাজ শুরু করে সেনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২০ ১৫:১৪
Share:

রবিবার বিকেলেও চলছে গাছ কাটার কাজ। এ ছবি দক্ষিণ কলকাতার প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের। নিজস্ব চিত্র।

প্রায় ৯০ ঘণ্টা নিষ্প্রদীপ থাকার পর রবিবার সকাল থেকে বিদ্যুৎ পরিষেবা খানিকটা হলেও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায়। রবিবার বিকেলে শহরের অধিকাংশ এলাকাতেই বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করা গিয়েছে বলে জানিয়েছে সিইএসসি। তবে এখনও কিছু কিছু অংশে বিদ্যুৎ সংযোগ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয় নি বলে স্বীকার করেছে সিইএসসি কর্তৃপক্ষ। সেখানে কাজ চলছে বলে জানানো হয়েছে।

Advertisement

শনিবার বিকেল থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে উপড়ে থাকা গাছ কেটে পরিষ্কার করার কাজ শুরু করে সেনা। এই কাজে পাঁচ কলাম সেনা সহযোগিতা করছে। সেই সঙ্গে গাছ কাটার কাজে সিইএসসি-কে সহায়তা করে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন পর্ষদের ঠিকা শ্রমিকদের একটি দল। রবিবার রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে টুইট করে জানানো হয়, কলকাতা শহরের একটি বড় অংশে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করা গিয়েছে বলে সরকারকে রিপোর্ট দিয়েছে সিইএসসি।

প্রায় গোটা রাতই গাছ কাটার কাজ চলে বিভিন্ন এলাকায়। দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় কয়েক হাজার গাছ বিদ্যুতের বাতিস্তম্ভ-সহ উপড়ে গিয়েছিল। সেগুলো প্রাথমিক ভাবে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করা যায় এমন ভাবে কেটে পরিষ্কার করা হয়। অনেক জায়গাতেই গাছের মূল কাণ্ড কেটে সরাতে সময় লাগছে। তাই প্রথমে উপড়ে যাওয়া গাছের সেই অংশ গুলো আগে কেটে দেওয়া হচ্ছে যেটা বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করার জন্য প্রয়োজনীয়।

Advertisement

রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, সিইএসসি-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রবিবার দুপুরের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে যাদবপুর, সেলিমপুর, মুকুন্দপুর, সার্ভে পার্ক, পাটুলি, রিজেন্ট এস্টেট, এনএসসি বোস রোড সংলগ্ন এলাকায়, বেহালা চৌরাস্তা, জেমস লঙ সরণি, শীলপাড়া, লেকটাউন, যশোহর রোডের একাংশে, নাগের বাজার, রাসবিহারী কানেক্টর, বিবি চ্যাটার্জি রোডে। বিদ্যুৎ পরিষেবা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে সল্টলেক এবং নিউটাউনেও।

তবে এই এলাকাগুলির বাইরেও শহরের একটা বড় অংশে এখনও, প্রায় চারদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। শুভায়ন চট্টোপাধ্যায় বৈষ্ণবঘাটা রোডের বাসিন্দা। তাঁর অভিযোগ, আশেপাশের বেশ কয়েকটি জায়গাতে বিদ্যুৎ এলেও তাঁদের এলাকা এখনও নিষ্প্রদীপ। রিজেন্ট এস্টেটে বিদ্যুৎ ফিরলেও, রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার একটা বড় অংশে এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। যেমন বাগুইআটির একাংশে বিদ্যুৎ চালু হলেও বাকি অংশ বিদ্যুৎহীন।

এ দিন বিকেলে রাজ্য স্বরাস্ট্র দফতরের পক্ষে ফের টুইট করে জানানো হয়, ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাস সংলগ্ন লস্করহাট, পাতিপুকুর, বেলগাছিয়া, মানিকতলা মেন রোড, আনোয়ার শাহ রোড সংলগ্ন হরিপদ দত্ত লেন এবং প্রিন্স বক্তিয়ার শাহ রোডে পরিষেবা চালু হয়ে গিয়েছে বলে সরকারকে জানিয়েছে সিইএসসি।

প্রায় চারদিন বিদ্যুৎ না থাকার সঙ্গে জল না থাকার যন্ত্রনায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বয়স্ক মানুষেরা। সুমন সরকার নামে বাগুইআটির এক বাসিন্দা বলেন, বাধ্য হয়ে সত্তরোর্ধ্ব বাবা-মা-কে পাঠাতে হয়েছে দিদির ফ্ল্যাটে। তাঁর দিদি থাকেন আগরপাড়ায়। এরকম একাধিক উদাহরণ রয়েছে। হরিদেবপুরের বাসিন্দা সুবল চন্দ্র দাস। বছর আশির এই বৃদ্ধ বলেন, ‘‘শনিবার বিকেলেই তাঁদের আবাসনে বিদ্যুৎ চালু হয়। কিছু দূরেই থাকেন তাঁর মেয়ে-জামাই। তাঁদের বাড়িতে রবিবার পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসেনি। ফলে মেয়ে জামাই এখন তাঁর বাড়িতেই রয়েছেন।”

আরও পড়ুন- পুরসভার ব্যর্থতা নিয়ে এ বার সরাসরি তোপ শোভনের

অনেক জায়গাতে বাসিন্দারাই চাঁদা তুলে লোক জোগাড় করে গাছ কাটাচ্ছেন। নিজস্ব চিত্র

আবার অনেক জায়গায় সেনা, এনডিআরএফ বা পুলিশের উপর নির্ভর না করে বাসিন্দারা নিজেরাই চাঁদা তুলে গাছ কাটার লোক জোগাড় করে গাছ কাটাচ্ছেন। রাজারহাট-বিষ্ণুপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারাই টাকা দিয়ে গাছ কাটিয়েছেন। সুজয় ঘোষ রায় রাজারহাটের কালীবাড়ি কমপ্লেক্সের বাসিন্দা। তিনি বলেন,‘‘আমাদের পঞ্চায়েতে মাত্র চারজন কর্মী যাঁরা এই কাজ করতে পারেন। আমরাই বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কর্মীদের জানাই যে আমরা গাছ কাটিয়ে দেব। তাঁরা যেন বিদ্যুতের সংযোগ দেন।” বাড়ি প্রতি কোথাও ৩০০ কোথাও বা ৫০০ টাকা চাঁদা দিয়ে বাড়তি মজুরি দিয়ে গাছ কাটিয়েছেন বাসিন্দারা।

রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের টুইট

সিইএসসি-র এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘আমরা আগেই বলেছিলাম, মঙ্গলবারের মধ্যে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে যাবে পরিষেবা। তবে সেনা, এনডিআরএফ কাজ শুরু করায়, আমরা আরও আগে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি পরিষেবা চালু করতে।” তবে তিনি সমস্যার কথাও বলেন। সিইএসসি সূত্রে খবর, এখনও খিদিরপুর এবং কলকাতা বন্দরের একটা বড় অংশ জলমগ্ন। এ রকম শহরের বেশ কিছু জায়গায় জল জমে রয়েছে। কোথাও বিদ্যুতের ড্রিস্ট্রিবিউশন বক্সে জল ঢুকে গিয়েছে। সেই সমস্ত জায়গায় পরিষেবা স্বাভাবিক করতে কিছুটা বেশি সময় লাগছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement