ধরাশায়ী: চিন্তামণি কর পক্ষী অভয়ারণ্যে উপড়ে গিয়েছে বেশির ভাগ গাছ। নিজস্ব চিত্র
‘সাজানো বাগানে’ যেন মত্ত হাতি তাণ্ডব চালিয়েছে! ঘূর্ণিঝড় আমপানের হামলার পরে দক্ষিণ শহরতলির রাজপুরে চিন্তামণি কর পক্ষী অভয়ারণ্যের পরিস্থিতি দেখে এ ভাবেই আক্ষেপ করছিলেন এক বনকর্তা। ঝড়ের তাণ্ডবে ১৭ একরের ওই বাগানের বেশির ভাগ গাছই উপড়ে পড়েছে। ভাঙা ডালের নীচে চাপা পড়ে রয়েছে পাখিদের বাসা। পাখিগুলির খোঁজ নেই। এই ধাক্কা সামলে ফের কবে সেখানে পাখির কূজন শোনা যাবে, তা বলতে পারছেন না বনকর্তারাও। তাঁরা বলছেন, আপাতত ভাঙা, উপড়ে পড়া গাছ সরানোই মূল চিন্তা। সেই কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করা হয়েছে।
কয়ালের বাগান নামে পরিচিত রাজপুরের বিরাট ওই ‘অরণ্যে’ পাখপাখালির বাস নতুন নয়। বাগান যাতে নষ্ট না-হয়, পাখিরা যাতে বাসাহারা না-হয় তার জন্য এলাকার মানুষকে নিয়ে ওই বাগান সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছিলেন ভাস্কর চিন্তামণি কর। ২০০৫ সালে শেষমেশ বাগানটি অধিগ্রহণ করে তৎকালীন রাজ্য সরকার। শিল্পীর নামেই নামকরণ হয় পক্ষী অভয়ারণ্যের। ২০১৭ সালে সংস্কার করা হয় সেটির। আমপানের হামলার পরে শুক্রবার ওয়েস্ট বেঙ্গল জ়ু অথরিটির সদস্য-সচিব বিনোদকুমার যাদব আক্ষেপ করছেন, ‘‘সত্যি বড় ক্ষতি হয়ে গেল। পাখিদের জন্য আম, পেয়ারা, কাঁঠালের মতো ফলের গাছ ছিল। সেগুলি বেশির ভাগই উপড়ে গিয়েছে। গাছের ডালে থাকা প্রচুর পাখির বাসা নষ্ট হয়েছে।’’
বন দফতর সূত্রের খবর, চিন্তামণি কর পক্ষী অভয়ারণ্যে অন্তত ৭০টি প্রজাতির পাখি থাকত। তার মধ্যে পাঁচ ধরনের কাঠঠোকরা, কয়েক ধরনের মাছরাঙার পাশাপাশি টিয়া, ক্রেস্টেড সার্পেন্ট ঈগল, শিকরা বাজ, কয়েক ধরনের পেঁচা, শামুকখোল, বিভিন্ন প্রজাতির বক, বাঁশপাতি, বুলবুলি রয়েছে। শীতকালে কিছু পরিযায়ী পাখিও যাতায়াতের পথে দিন কয়েক আস্তানা গাড়ে সেখানে। সেই সব পাখিরা এখন কোথায় গেল, তা নিয়েই পক্ষীপ্রেমীদের চিন্তা বেড়েছে। নতুন করে গাছ লাগালেও ফের কত দিনে তা বড় হবে এবং ঠাঁইহারা পাখিরা পুরনো পাড়ায় ফিরবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এক বনকর্তা বলেন, ‘‘পাখিদের পাশাপাশি ওই অভয়ারণ্যে ভাম, শেয়াল, গোসাপের মতো প্রাণীরাও ছিল। তাদেরও কী অবস্থা তা দেখতে হবে।’’