উৎপাটিত: রাস্তায় উপড়ে পড়েছে গাছ। বৃহস্পতিবার, ফোর্ট উইলিয়ামের কাছে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মাত্র কয়েক ঘণ্টার প্রলয়ে শেষ হয়ে গেল বায়ুদূষণে জেরবার মহানগরীর প্রায় পাঁচ হাজার গাছ। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, সবুজ ধ্বংসের নিরিখে ঘূর্ণিঝড় আমপান রেয়াত করেনি কোনও এলাকাকেই। বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শহরের প্রচুর গাছ নষ্ট হয়েছে আমপানে। ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। হর্টিকালচারকে বলেছি, গাছের চারা তৈরি করতে।’’
হাজরা থেকে এক্সাইড মোড় মাত্র দু’কিলোমিটার। বুধবার ঝড়ের দাপটে শুধু ওইটুকু অংশেই উপড়ে পড়েছে প্রায় ২০টি গাছ। আবার টালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে করুণাময়ী সেতু পর্যন্ত রাস্তায় পড়েছে প্রায় ১৫টি ছোট-বড় গাছ। টালা থেকে টালিগঞ্জ কিংবা বেহালা থেকে বৌবাজার, সর্বত্রই উপড়ে পড়েছে বড় বড় গাছ।
এ দিন সকাল থেকেই দেখা যায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, পার্ক স্ট্রিট, সাদার্ন অ্যাভিনিউ, হরিশ মুখার্জি রোড, লেক গার্ডেন্স, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড, বেহালা পর্ণশ্রী, ডায়মন্ড হারবার রোড, রামগড়, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, বাঘা যতীন, রাজা সুবোধ মল্লিক রোড, পার্ক সার্কাস এবং এনএসসি বসু রোড-সহ শহরের অসংখ্য রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে গাছ ভেঙে পড়ায়। বহু জায়গায় ভেঙে পড়েছে বিদ্যুৎ ও ট্র্যাফিক সিগন্যালের স্তম্ভও। কোথাও বা ট্রামলাইনের তারে জড়িয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে বড় বড় গাছ।
ঝড় এতটাই বিধ্বংসী ছিল যে, বুধবার সন্ধ্যায় বা রাতে পথেই নামতে পারেননি পুরকর্মীরা। এ দিন বেলা বাড়তে প্রতিটি বরোয় স্বয়ংক্রিয় করাত, মই এবং ক্রেন নিয়ে গাছ কাটার কাজ শুরু হয়। শহরে ঠিক কতগুলি গাছ ভেঙেছে, তার নির্ভুল হিসেব দিতে পারেনি পুরসভা। তবে পুর কর্তৃপক্ষের মতে, সংখ্যাটা হাজার পাঁচেকের আশপাশে।
লালবাজার জানিয়েছে, বড় রাস্তাগুলি যান চলাচলের উপযুক্ত করতে এ দিন বিভিন্ন থানা, ট্র্যাফিক গার্ড এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা কাটারি, করাত জোগাড় করে নেমে পড়েন গাছ কাটতে। এসএসকেএম হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তা করে দিতে বুধবার ঝড়ের মধ্যেই ভবানীপুর থানার পুলিশ গাছ কাটতে নেমেছিল।
কলকাতা পুলিশের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার জানান, বড় বড় রাস্তায় গাছ পড়ে যান চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ১০ মিনিটের পথ যেতে ঘুরতে হচ্ছে প্রায় এক ঘণ্টা। তাই পুরসভার কর্মীদের অপেক্ষায় না থেকে পুলিশকর্মীরাই গাছ কেটে গাড়ি
চলার রাস্তা করে দিয়েছেন। কোথাও কোথাও স্থানীয় বাসিন্দারাও হাত লাগিয়েছেন ওই কাজে। নেতাজিনগরে যেমন দেখা যায়, কারও জন্য অপেক্ষা না করে এলাকার লোকজনই রাস্তা সাফাইয়ের কাজে নেমে পড়েছেন।
বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত পুর ভবনে ছিলেন পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম এবং দুই সদস্য দেবাশিস কুমার ও তারক সিংহ। শেষ রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে তাঁদেরও নজরে পড়ে গাছ এবং বিদ্যুৎ ও ট্র্যাফিক সিগন্যালের স্তম্ভ ভেঙে বন্ধ হয়ে রয়েছে বহু রাস্তা। পুরসভা সূত্রের খবর, পার্ক স্ট্রিটের ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডে একশোরও বেশি গাছ ভেঙে পড়েছে। বেলেঘাটা, কাঁকুড়গাছি ও উল্টোডাঙায় প্রায় ৭৫টি গাছ পড়েছে।
ওই বরোয় ক্যানাল সার্কুলার রোডের খালপাড় সংলগ্ন বেশ কিছু ঝুপড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। লেক গার্ডেন্সেও প্রচুর গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে। বাইপাসের ধারে ১২ নম্বর বরো এলাকার হালও বেশ খারাপ। সেখানে খালপাড়ের প্রায় ২০০টি ঘরের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। একাধিক ঘরের চালে পড়েছে গাছ। বেহালার বিভিন্ন এলাকাতেও রাস্তায় গাছ পড়ে বন্ধ যান চলাচল।
রাস্তাঘাট মুক্ত হবে কবে? পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমার এ দিন বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে বড় রাস্তাগুলি যাতে গাড়ি চলাচলের যোগ্য করে তোলা যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। তবে অলিগলি থেকে গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে দিন সাতেক সময় লাগবে।’’