ক্রমশ কি বিপদের মেঘ ঘনাচ্ছে সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকে?
সেক্টর ফাইভের বিপিও সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে একের পর এক সাইবার জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসায় এমনই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা বলছেন, রাজ্যে ভারী শিল্প নেই। শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ভরসা বিপিও। কিন্তু জালিয়াতির ঘটনায় সেই শিল্প মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
ন্যাসকমের প্রাক্তন আঞ্চলিক অধিকর্তা সুপর্ণ মৈত্র বলছেন, বারবার এমন ঘটলে সংস্থার সুনাম নষ্ট হবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই মত, সুনাম নষ্টের ফলে নতুন কর্মী নিয়োগ তো হবেই না, উল্টে চাকরিও হারাতে হতে পারে অনেককে।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সঙ্গে জড়িত একাংশ জানাচ্ছেন, কয়েক মাস আগে এক সংস্থা থেকে বিদেশি টেলিকম সংস্থার তথ্য চুরি হয়। তার পরে ওই টেলিকম সংস্থা কাজের বরাত ফিরিয়ে নেওয়ার হুমকি দেয়। সুপর্ণবাবু বলছেন, ‘‘আমেরিকা, ইংল্যান্ডের মতো দেশের অধিকাংশ কাজ এ দেশ থেকে করানো হয়। এমন ঘটনা বারবার ঘটলে বিপিও সেক্টরে ভারতের প্রতিযোগী দেশগুলি সেই উদাহরণ টেনে নিজেদের দেশে কাজ নিয়ে যাবে।’’
সম্প্রতি একটি ঘটনার পরে এই আশঙ্কা আরও বেড়েছে মনে করছেন অনেকে। কী সেই ঘটনা?
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সম্প্রতি জার্মান পুলিশের একটি দল অভিযোগ করে, একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার নাম করে সে দেশের ১২ হাজার লোককে ঠকিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের সংস্থা। প্রতারণার পরিমাণ ২২ কোটি টাকা। ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে সিআইডি। কিছু দূর এগোনোর পরেই চোখ কপালে উঠেছে গোয়েন্দাদের। সিআইডি-র সাইবার-কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এই প্রতারণার জাল জার্মানি ছাড়াও ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্কে ছড়িয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতারণার পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে।’’
একের পর এক জালিয়াতির অভিযোগ যে গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, তা মেনে নিয়ে সেক্টর ফাইভ ইন্ডাস্ট্রিজ ফোরামের সহ-সভাপতি কল্যাণ কর বলেন, ‘‘বিপিও-র কাজে বিশ্বাসযোগ্যতাই আসল। এই বিষয়টির সঙ্গে বহু মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। সেটাও মাথায় রাখতে হবে।’’ তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বলছেন, এই শিল্পকে বাঁচাতে তথ্য সুরক্ষা জোরদার করতে হবে।
কিন্তু এই শিল্পে যুক্ত অনেকেরই বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রে সংস্থাগুলিই জালিয়াতিতে যুক্ত। উত্তর ২৪ পরগনার এক যুবক জানান, একটি বিপিও সংস্থায় ঢোকার পরে তাঁকে বলা হয়, বিদেশি গ্রাহকদের ফোন করে একটি সংস্থার পরিষেবা নেওয়ার জন্য বোঝাতে হবে। সে জন্য ওই গ্রাহকের কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া যে জরুরি, তা নিশ্চিত করতে হবে। তার পরে যা করার, সংস্থার কর্তা এবং অভিজ্ঞ কর্মীরা করবেন। ‘‘কয়েক মাস পরেই বুঝতে পারি, সংস্থাটি প্রতারণা করছে। তার পরেই চাকরি ছেড়ে দিই’’— বলছেন ওই যুবক।
প্রশ্ন উঠেছে, সংস্থাই যদি সরাসরি প্রতারণায় জড়ায়, কর্মীরা কী করবেন? সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলিকে সক্রিয় হতে হবে। তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতি প্রণয়নের প্রয়োজন আছে। জালিয়াতি ঠেকাতে কর্মীদের প্রশিক্ষণও জরুরি। এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্তা বলছেন, ‘‘জালিয়াতির ঘটনা শুনলে নিজে থেকেই গ্রাহকদের জানাতে হবে। যাতে অন্তত তাঁরা বুঝতে পারেন যে সংস্থাগুলিও এ ব্যাপারে উদ্যোগী।’’