ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে ধর্মতলা মোড়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সরকারি বাসের জন্যে অপেক্ষা করছেন এক মহিলা। কিন্তু তার দেখা মেলা ভার। বাসস্টপ থেকে সরে পাশের দোকানে গিয়ে সবে বসেছেন, তখনই হওড়ার বাস হাজির। ফের বাসস্টপে পৌঁছনোর আগেই বাস উধাও। অগত্যা ফের রোদ মাথায় বেশ কিছুক্ষণের অপেক্ষা।
ডালহৌসির অফিস থেকে সবে বেরিয়েছেন এক যুবক। কার্যত নাকের ডগা দিয়েই বেরিয়ে গেল সরকারি বাস। একটুর জন্য হাতছাড়া!
এর থেকে মুক্তির উপায় কী?
কলকাতার রাস্তায় নিত্য দিনের যানজটে সময় মেনে বাস চালানো কার্যত সম্ভব নয়। কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি) সূত্রের খবর, নিত্যযাত্রীদের থেকে এ রকম বহু অভিযোগ তাঁদের দফতরে এসেছিল। তার পরেই এই অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টা করেছেন সিএসটিসি-র কর্তারা। সেই ভাবনা থেকেই এ বার বদলাতে চলেছে ওই চিত্র।
সিএসটিসি-র দাবি, লাক্সারি ট্যাক্সির মতো এ বার তাদের বাসেও আসতে চলেছে ‘অ্যাপ’। হাতে থাকা মোবাইল ফোনেই ধরা দেবে গোটা একটি বাস। মোবাইল ফোনে অ্যাপ ডাউনলোড করে সহজেই বাড়ি বা অফিসে বসে মুহূর্তে জানা যাবে বাসের গতিবিধি। সিএসটিসি কর্তাদের দাবি, এই অ্যাপ চালু হলে বাসস্টপে হা-পিত্যেশ করে দাঁড়িয়ে থাকার দিন শেষ হবে।
ইতিমধ্যেই বিমান ও জাহাজের অবস্থান জানতে এক বেসরকারি সংস্থা ওয়েবসাইট চালু করেছে। অনেকটা সে ভাবেই সিএসটিসি চালু করছে বাসের অবস্থান জানার অ্যাপ্লিকেশন।
কী রকম হবে সেই অ্যাপ?
নিগমের এক কর্তা জানান, হাওড়া ও কলকাতায় সিএসটিসি-র প্রায় সাতশো বাস চলে। সেগুলির সময় সারণি নিয়ে সমস্ত ডেটা তৈরি করা হয়ে গিয়েছে। এ বার সেগুলি একটি সিম কার্ডে ট্রান্সফারের কাজ চলছে। বর্তমানে সমস্ত বাসেই জিপিএস সিস্টেম রয়েছে। ওই সিম জিপিএসের সঙ্গে সংযোগ করার পরেই সার্ভারের সঙ্গে যোগ করা হবে। এর পরে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে ওই অ্যাপ তৈরি করা হবে। যেটা হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। সেখানেই থাকবে সমস্ত বাসের সময় সারণি। এবং সার্ভারের সঙ্গে সরাসরি যোগ থাকায় মোবাইলে মুহূর্তে জানা যাবে বাসের গতিবিধিও।
কী ভাবে জানা যাবে বাসের গতিবিধি?
ধরা যাক, কেউ ডালহৌসি থেকে হাওড়া যেতে চান। তা হলে তিনি ওই অ্যাপে ডালহৌসি থেকে হাওড়া লিখলেই সেখানে জানিয়ে দেওয়া হবে ওই রুটের বাস কোথায়, কত দূরে আছে। সংশ্লিষ্ট স্থানে পৌঁছতেই বা আনুমানিক কত সময় লাগবে। শুধু একটি বাসই নয়, তার পরের বাসটিও কোথায় আছে, তা জানানো হবে ওই অ্যাপে। ওই কর্তা বলেন, ‘‘এর ফলে মানুষের বহু সময় বাঁচবে। কারণ বাসের অবস্থান জেনেই বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন যাত্রীরা।’’ জেনে নেওয়া যাবে পরের
বাসের অবস্থানও।
এর আগে সমস্ত নিগম মিলিয়ে একই টিকিট ব্যবস্থা চালু করার কাজ শুরু করেছিল সিএসটিসি। সেই কাজ মাঝপথেই বন্ধ করে দিতে হয়েছে পরিকল্পনার অভাবে। অ্যাপ চালুর এই ভাবনাও সে রকম হবে না তো? এই নিয়ে সন্দিহান সিএসটিসি কর্তাদেরই একাংশ। যদিও পরিবহণ দফতরের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘ওটা অনেক বড় প্রকল্প ছিল। তার জন্য যতটা বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রয়োজন ছিল, তা হয়নি। এ ক্ষেত্রে সে সমস্যা নেই। তাই এই ভাবনা সফল হবে বলেই মনে হচ্ছে।’’