Durga Puja 2022

বৃষ্টিহীন মহালয়ায় বাঁধ ভাঙল কেনাকাটা, চেনা ছন্দে শহর

বড়বাজারে মা আর স্বামীর জন্য কেনাকাটা সেরে নিউ মার্কেট সংলগ্ন পার্কিংয়ে জায়গা পেতে কর্মীর কাছে কাকুতিমিনতি করছিলেন শ্রীতমা। পাশে কাঁচুমাচু কর্তা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৫৬
Share:

জনজোয়ার: পুজোর আগে শেষ রবিবারে নিউ মার্কেট চত্বরে পা ফেলার জায়গা নেই। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

পুজোর আগে শেষ রবিবার। আবার মহালয়াও। বেশির ভাগ কেনাকাটাই শেষ। বাকি বলতে মায়ের গরদ, ননদের আনারকলি কুর্তি, বরের আঙ্গরখা, নিজের জন্য টুপার্ট কুর্তি আর প্লিটেড স্কার্ট, ছেলের বায়না বম্বার জ্যাকেট। এই কিনতেই খড়দহ থেকে শ্রীতমা মুখোপাধ্যায় সক্কাল সক্কাল ছেলে আর স্বামীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। প্রথমে বড়বাজার, সেখান থেকে নিউ মার্কেট, শেষে গড়িয়াহাট। সারা দিনের পেটপুজো পথেই।

Advertisement

বড়বাজারে মা আর স্বামীর জন্য কেনাকাটা সেরে নিউ মার্কেট সংলগ্ন পার্কিংয়ে জায়গা পেতে কর্মীর কাছে কাকুতিমিনতি করছিলেন শ্রীতমা। পাশে কাঁচুমাচু কর্তা। নাছোড় দম্পত্তির অনুরোধে পার্কিংয়ের কর্মীর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল, ‘‘দাদা, তখন থেকে বলছি জায়গা ফাঁকা নেই, শুনতেই চাইছেন না! মানুষ দাঁড়ানোর জায়গা নেই। গাড়ি কি আকাশে রাখব?’’

সত্যিই এ দিন নিউ মার্কেটে গাড়ি রাখার জায়গা পাওয়া ছিল লটারি জেতার মতো। দোকানে ঢুকতেই বেগ পেলেন ক্রেতা। সমানে টক্কর দিল গড়িয়াহাট, হাতিবাগান। পিছিয়ে ছিল না শপিং মলও। বিকেলের পরে শহর জুড়ে মন্থর হল চাকা। সন্ধ্যায় দুলকি চালে বিধান সরণি ছাড়তে বাসের লাগল ঘণ্টাখানেক। একই অবস্থা গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট সংলগ্ন রাস্তায়। গড়িয়াহাটের এক ট্র্যাফিক কর্মীর আক্ষেপ, ‘‘বাঁশি বাজাতে বাজাতে মুখ ব্যথা হয়ে গেল। বসতেই পারলাম না! পুজো শেষ হলে বাঁচি।’’

Advertisement

তবে এ দিন সবাইকে ছাপিয়ে যায় নিউ মার্কেট। গিজগিজে কালো মাথার স্রোত। দমবন্ধ অস্বস্তি। দরদর করে ঘামছিলেন নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী অমর হালদার। খদ্দের সামলানোর ফাঁকেই একমুখ হাসি নিয়ে বললেন, ‘‘আজ ভিড় হবে না তো, কবে হবে! ক্রেতারা আজ সারা রাত বাজারে থাকলে আমরাও আছি।’’ মাইক হাতে ভিড় সামলাতে ব্যস্ত পুলিশের কানে কথাটা কি গেল?

সকালের দিকে ভিড় কম থাকলেও দুপুরের পরে ছন্দে ফেরে গড়িয়াহাটও। একগাদা ব্যাগ হাতে হাঁটতেই পারছিলেন না তাপসী ভট্টাচার্য। বললেন, ‘‘ভিড় এড়াতে সকাল সকাল এসেছি। বিকেলে এলে কী হত, সেটাই ভাবছি।’’ এ দিন গড়িয়াহাটের যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে ব্যারিকেড করতেও দেখা গেল। সন্ধ্যার পর হাতিবাগানের ভিড়ে থমকে যায় বিবেকানন্দ রোডের গতি। ব্যবসায়ী সুবীর সাহা বলেন, ‘‘কেনাবেচা হচ্ছে। ঝড়-বৃষ্টি এসে সপ্তাহটা বিগড়ে না দিলেই রক্ষে।’’

ভিড় ছিল কসবা, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড, পার্ক সার্কাসের শপিং মলে। দুপুরের পর থেকে পার্কিং খালি না থাকার বোর্ড ঝুলিয়েছিল প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের শপিং মল। সেখানকার জেনারেল ম্যানেজার দীপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘সন্ধ্যা পর্যন্ত পা পড়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি মানুষের। এই মরসুমে রবিবারের বাজারে এটাই সবচেয়ে বেশি ভিড়।’’ ভিড়ের আগাম আন্দাজ করেছিলেন কসবার এক শপিং মল কর্তৃপক্ষ। তাই বাইরে বাড়তি পুলিশকর্মী মোতায়েন দেখা গেল। বান্ধবীকে নিয়ে মলে এসেছিলেন শুভ রক্ষিত। বললেন, ‘‘নিউ মার্কেটে গিয়েছিলাম। থাকতে পারিনি। এখনও শপিং মলে ঠেলাঠেলিটা শুরু হয়নি।’’

বৃষ্টিহীন মহালয়ার রবিবারে সব পেলেন কি শ্রীতমা? কিছু বাকি থাকলে না-হয় আসছে বছরের অপেক্ষা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement