COVID-19

হাসপাতালে বাড়ছে করোনা রোগী, শহর তবু উদাসীন

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এক সময়ে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড রোগীদের ভর্তির সংখ্যা কমেছিল। কোথাও দিনে এক জনও রোগী ভর্তি হননি। সেই পরিসংখ্যান দেখেই উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন শহরবাসীর একাংশ।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২১ ০৫:৫০
Share:

n বিধিভঙ্গ: লাফিয়ে লাফিয়ে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতেই নিয়ম মানার বালাই নেই। শনিবার শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি (বাঁ দিকে), সংযুক্ত মোর্চা (ডান দিকে) কর্মী-সমর্থকদের মিছিল। ছবি: সুমন বল্লভ ও স্বাতী চক্রবর্তী

করোনায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনই শহরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বেড়ে চলেছে রোগী ভর্তির সংখ্যা। তার পরেও চরম উদাসীন শহরবাসী, এমনই আক্ষেপ চিকিৎসকদের একাংশের।

Advertisement

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এক সময়ে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড রোগীদের ভর্তির সংখ্যা কমেছিল। কোথাও দিনে এক জনও রোগী ভর্তি হননি। চিকিৎসকদের দাবি, সেই পরিসংখ্যান দেখেই উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন শহরবাসীর একাংশ। সেই রেশ বজায় রয়েছে। ফলে গণপরিবহণ থেকে চৈত্র সেলের বাজার— শহরে বিধি মেনে চলার পরোয়া অনেকেই করছেন না। ভোটের প্রচারে গিয়েও মাস্ক পরতে দেখা যাচ্ছে না রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রী ও কর্মী-সমর্থকদের অনেককেই। সভা-মিছিল-সমাবেশেও শিকেয় উঠেছে দূরত্ব-বিধি।

এক শ্রেণির মানুষের অতি উচ্ছ্বাসই ফের বিপদ ডেকে আনছে বলে মত চিকিৎসকদের। তাঁদের কথায়, ‘‘দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যাতেই স্পষ্ট যে, ফের করোনার প্রকোপ বাড়ছে।’’ এর আগে পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যের কিছু বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা নিয়েছিল প্রশাসন। গত বছরের শেষ দিকে সংক্রমিতদের হাসপাতালে ভর্তির হার কমতে থাকায় প্রশাসনও ধাপে ধাপে বেসরকারি হাসপাতালের শয্যা ছেড়ে দেয়। তবে আগামী দিনে জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে তিন দিনের নোটিসে ওই সব হাসপাতালের শয্যা পুনরায় নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছিল। পাশাপাশি, সরকারি হাসপাতালেও কমানো হয়েছিল করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দ শয্যা।

Advertisement

এ দিকে, ফের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় তৎপর স্বাস্থ্য দফতরও। শনিবার স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দ্বিতীয় ঢেউ এলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তার মোকাবিলা করতে এখন থেকেই সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো জোরদার করার দিকে নজর দিচ্ছি। যে কোনও সময়ে প্রয়োজন হলে পুনরায় বেসরকারি হাসপাতালের সহযোগিতা নেওয়া হবে।’’ প্রশাসনকে ফের সহযোগিতা করতে তাঁরা প্রস্তুত বলে জানিয়ে পূর্ব ভারতীয় বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনের সভাপতি রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘‘প্রথম পর্বে করোনা নতুন বিষয় ছিল। এখন বিষয়টির মোকাবিলা সম্পর্কে সকলেই অবগত। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, মানুষ গা-ছাড়া মনোভাব দেখাবেন। যে ভাবে দৈনিক আক্রান্ত বাড়ছে, সেটা অবশ্যই ভয়ের।’’

পরিসংখ্যান বলছে, গত ১ মার্চ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছিলেন ৫৬ জন রোগী। ১৯ মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭০। একই ভাবে এম আর বাঙুর, বেলেঘাটা আইডি, কামারহাটি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ-সহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের চিকিৎসক রাজা ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘হাসপাতালে কোভিড রোগী বাড়ছে। কয়েক জন সঙ্কটজনক অবস্থায় আসছেন। নিউমোনিয়া, অত্যধিক বেশি হৃৎস্পন্দনের মতো সমস্যাও থাকছে। ঢিলেঢালা ভাব ত্যাগ করে সকলকেই কোভিড-বিধি মেনে চলতে বলব।’’

সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরাও। পিয়ারলেস হাসপাতালের কর্তা সুদীপ্ত মিত্র বলছেন, ‘‘একটা সময়ে হাসপাতালে ৬টি করোনা ওয়ার্ড ছিল। আক্রান্ত কমে যাওয়ায় পরে তা কমিয়ে একটি করা হয়। দীর্ঘ দিন সেখানে ৫-৬ জনের বেশি রোগী থাকতেন না। এখন সেখানে রয়েছেন ২০ জনের বেশি। আরটিপিসিআর পরীক্ষার সংখ্যাও বেড়েছে। দৈনিক প্রায় ৩০০ জন পরীক্ষা করাচ্ছেন, অন্তত ৪ শতাংশের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসছে।’’ আক্রান্তের হার নিম্নমুখী হওয়ায় দমদমের আইএলএস হাসপাতালে শয্যা কমিয়ে ১০টি করা হয়েছে। তার সব ক’টিই এখন ভর্তি। ওই হাসপাতাল গোষ্ঠীর ভাইস প্রেসিডেন্ট দেবাশিস ধর বলেন, ‘‘দ্বিতীয় ঢেউ সম্পর্কে নিশ্চিত বলা না গেলেও আক্রান্ত বাড়ছে। তাই প্রতিষেধক গ্রহণ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনই কোভিড-বিধিও মানতে হবে।’’

যদিও চিকিৎসক থেকে হাসপাতালকর্তা, সকলেরই সংশয়— কোভিড-বিধি মানবেন ক’জন!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement