পুলিশি খাতায় অপরাধীদের স্বর, চোখের মণি

বেশ কিছু দিন পরে লালবাজার জানতে পারে, ওই জাল নোট পাচারকারী আসলে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের জঙ্গি ইয়াসিন ভাটকল। নাম ভাঁড়িয়ে কলকাতায় ধরা পড়েছিল সে। পুলিশের একাংশ জানিয়েছিল, ছবি না মেলাতেই তখন গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিয়েছিল ওই জঙ্গি।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৪৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

কয়েক বছর আগে মধ্য কলকাতা থেকে জাল নোট-সহ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিছু দিন জেল খাটার পরে জামিনে মুক্ত হয়ে ফেরার হয়ে যায় সে।

Advertisement

বেশ কিছু দিন পরে লালবাজার জানতে পারে, ওই জাল নোট পাচারকারী আসলে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের জঙ্গি ইয়াসিন ভাটকল। নাম ভাঁড়িয়ে কলকাতায় ধরা পড়েছিল সে। পুলিশের একাংশ জানিয়েছিল, ছবি না মেলাতেই তখন গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিয়েছিল ওই জঙ্গি।

অপরাধী ধরা পড়ার পরে পুলিশের চোখকে যাতে ফাঁকি দিতে না-পারে, সে জন্য এখন থেকে ধরা পড়া দুষ্কৃতীদের গলার স্বর এবং চোখের মণির ছবি সংগ্রহ করে তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হবে। লালবাজারের ‘ক্রিমিনাল রেকর্ড সেকশন’ বা সিআরএস ইতিমধ্যেই ওই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আগেও সিআরএসের তরফে ধৃত এবং সন্দেহভাজন অপরাধীদের আঙুলের ছাপ এবং ছবি-সহ সবিস্তার তথ্য সংগ্রহ করে রাখা হত, শনাক্ত প্রক্রিয়ার জন্য। গোয়েন্দাদের একাংশের মতে, পুরো প্রক্রিয়ায় কিছু ফাঁক থেকে গিয়েছিল।

Advertisement

তাই কলকাতা পুলিশের কমিশনার রাজীব কুমারের নির্দেশে ওই নতুন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। এতে অপরাধীদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত চালু হবে বলে মনে করছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা।

এ জন্য কলকাতা পুলিশের তরফে পরীক্ষামূলক ভাবে নতুন অ্যাপ চালু করা হয়েছে। যা খুব শীঘ্রই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত অফিসারদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। যেখানে অপরাধীর ‘অপরাধের জীবনপঞ্জি’র পাশাপাশি তার সব নমুনাও থাকবে। বর্তমানে চালু থাকা সিআরএসের ওয়েবসাইটে শুধুমাত্র ছবি এবং আঙুলের ছাপ থাকে।

অভিজ্ঞ পুলিশ কর্তাদের মতে, গলার স্বর এবং চোখের মণির ছবি সংগ্রহ করে রাখা আধুনিক পদ্ধতি এবং বৈজ্ঞানিক ভাবে স্বীকৃত। আঙুলের ছাপ রাখার পদ্ধতিও বৈজ্ঞানিক ভাবে স্বীকৃত। এই ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়াও কঠিন। তবুও সেই ব্যবস্থাকে আরও কঠোর করতেই নতুন নতুন পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। যাতে অপরাধী ফোনে কথা বললেও গলার স্বর পরীক্ষা করে তাকে শনাক্ত করা যাবে।

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, গলার স্বর এবং চোখের মণির ছবি সংগ্রহের পাশাপাশি এখন থেকে কলকাতা পুলিশ এলাকার প্রতিটি থানা নিজেরাই ধৃত অপরাধীর সবিস্তার তথ্যপঞ্জি বা নমুনা সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে পারবে। এত দিন এই কাজ লালবাজার থেকে করা হত।

দশটি থানার হাতে ওই দায়িত্ব তুলে দিল লালবাজার। ধীরে ধীরে অন্য থানাগুলিকেও এই দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু কেন থানাগুলির হাতে তুলে দিল লালবাজার?

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, কলকাতার পুলিশ কমিশনার ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাসী। তাই লালবাজারের হাতে থাকা অনেক ক্ষমতাই থানা বা ডিভিশনের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি। এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

কলকাতা পুলিশের কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, সিআরএস করানো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এত দিন অপরাধী ধরা পড়লে তাকে নিয়ে আসা হতো লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের সিআরএসে।

কিন্তু অনেক সময়ই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে আদালতে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে সময়ের বিশেষ ফারাক থাকে না। ফলে তখন কোনটা আগে হবে তা নিয়ে বিস্তর সমস্যা তৈরি হয়। তা ছাড়াও কলকাতা পুলিশ এলাকার সীমানা ভাঙড় থেকে নাদিয়াল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ওই সব জায়গা থেকে দুষ্কৃতীকে লালবাজারে নিয়ে এসে ফের আদালতে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই নতুন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।

লালবাজারের এক কর্তা জানিয়েছেন, প্রতিটি থানার অফিসারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে যাতে তাঁরা নতুন পদ্ধতিতে দ্রুত দুষ্কৃতীদের আঙুলের ছাপ, গলার স্বর এবং চোখের মণির ছবি সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন।
যাতে যে কোনও থানা বা গোয়েন্দা বিভাগ তা প্রয়োজনের সময়ে ব্যবহার করতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement