ইডির আইনজীবী বলেন, ‘‘আদালত চাইলে এখনই সশরীরে আপনার (বিচারক) বাড়িতে আনতে পারি অনুব্রতকে।’’ —নিজস্ব চিত্র।
শুরু হয়েছিল ভার্চুয়াল মাধ্যমে। কিন্তু আধঘণ্টা শুনানি চলতে না চলতেই তা স্থগিত হয়ে যায়। সিদ্ধান্ত হয়, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং অনুব্রত মণ্ডল— দু’পক্ষই বিচারক রাকেশ কুমারের বাড়িতে যাবে। রাত ১১টা ২০ মিনিট নাগাদ রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টের বিশেষ সিবিআই আদালতে গরু পাচার মামলায় ধৃত অনুব্রতের শুনানি শুরু হয়। বিচারক রাকেশ কুমারের এজলাসে শুনানিতে ইডির আইনজীবী তাঁর সওয়াল শুরু করেন। প্রথমেই অনুব্রতকে ১৪ দিনের জন্য বিচারবিভাগীয় হেফাজতে চায় ইডি। পাল্টা অনুব্রতের আইনজীবী তাঁর মক্কেলের সারা দিনের ধকলের প্রসঙ্গ তোলেন। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, এমন গুরুত্বপূর্ণ মামলা ভার্চুয়ালি শোনা উচিত নয়। দু’পক্ষের সওয়ালে আধঘণ্টার একটু বেশি সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় শুনানি। স্থির হয়, দু’পক্ষই মধ্য রাতে রওনা দেবে বিচারকের বাড়ির উদ্দেশে।
মঙ্গলবার রাতেই অনুব্রতকে নিয়ে দিল্লি পৌঁছয় ইডি। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁকে ভার্চুয়ালি হাজির করানো হয় আদালতে। শুনানির শুরুতেই বিচারক রাকেশ কুমার বলেন, ‘‘অনেক দিন পরে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দিলাম। তাই একটু সমস্যা হচ্ছে।’’ ইডির আইনজীবী নীতেশ রানা ১৪ দিনের জন্য কেষ্টকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানান। তবে অনুব্রতের আইনজীবী মুদিত জৈন বলেন, ‘‘এই মামলায় ভার্চুয়াল হাজিরা হওয়া উচিত নয়। সশরীরে হাজিরা দেওয়ার কথা।’’ ওই আইনজীবীর অভিযোগ, মক্কেলের সঙ্গে তাঁর কোনও কথা বলা হয়নি। তিনি কথা বলার সুযোগই পাননি। অনুব্রতের আইনজীবী এ-ও জানান, মঙ্গলবার টানা সফর করতে হয়েছে তাঁর মক্কেলকে। তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। অনুব্রত অসুস্থ। তাঁকে সময় দেওয়া হোক। এখন হাজিরা বাতিল করা হোক বলে আর্জি জানান মুদিত। তাঁর সওয়াল, ‘‘কলকাতা হাই কোর্ট অভিযুক্তের শারীরিক অবস্থার উপরে জোর দিয়েছে। এই অবস্থায় মাঝরাতে হাজির করানো উচিত নয় অনুব্রতকে। এখানকার হাসপাতাল যে রিপোর্ট দিয়েছে তা-ও সন্তোষজনক নয়। অন্তত সকাল পর্যন্ত সময় দেওয়া হোক।’’
ইডির আইনজীবী যদিও পাল্টা সওয়াল করেন। তিনি বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে অনেক সময় ভার্চুয়াল পদ্ধতি কাজে লাগানো হয়েছে। অনুব্রতের আইনজীবীই তো সশরীরে হাজির হননি!’’ বিচারকের উদ্দেশে ইডির আইনজীবী বলেন, ‘‘তা হলে ৩০ মিনিট সময় দিন। অনুব্রতকে নিয়ে বাড়ি (আপনার) আসছি।’’ এর পরেই ঠিক হয় অনুব্রতকে নিয়ে বিচারক রাকেশ কুমারের বাড়িতে যাবে ইডি। শেষ হয়ে যায় ভার্চুয়াল শুনানি।
গত বছরের অগস্টে গ্রেফতার হন অনুব্রত। বেশ কয়েক বার জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে তাঁর। পরে ইডি তাঁকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। গরু পাচার মামলায় অনেক আগেই গ্রেফতার হয়েছেন অনুব্রতের প্রাক্তন দেহরক্ষী সহগল হোসেন। ইডির করা মামলার প্রেক্ষিতে তাঁকে এই মুহূর্তে রাখা হয়েছে দিল্লির তিহাড় জেলে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা বার বার দাবি করে এসেছেন অনুব্রতেরও হাত রয়েছে গরু পাচারে। যদিও তৃণমূল নেতার আইনজীবী সওয়াল করেছেন এমন কোনও অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
ভার্চুয়াল শুনানিতে অনুব্রত। —নিজস্ব চিত্র।
এর আগে দিল্লিযাত্রা আটকাতে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অনুব্রত। কিন্তু গত শনিবার আদালত সেই আর্জি খারিজ করে দেয়। পাশাপাশি দিল্লি এবং কলকাতা হাই কোর্টে আবেদনে তথ্যগোপন করায় ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করে। হাই কোর্ট জানায় অনুব্রতকে ইডি দিল্লি নিয়ে যেতে পারবে। তবে তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে কলকাতার কোনও কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালে। পাশাপাশি বিমানযাত্রার সময়ও তাঁর সঙ্গে এক জন চিকিৎসককে রাখতে হবে। দীর্ঘ টানাপড়েনের পর মঙ্গলবার সকালে আসানসোলের সংশোধনাগার থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লি উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় গরুপাচার মামলায় ধৃত অনুব্রতকে।