ফাইল ছবি
রাজ্যে আবার তার জাল বিস্তার করতে শুরু করেছে অতিমারি। বুধবারই সংক্রমিতের সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে তিন হাজারের দোরগোড়ায়। এই অবস্থায় শহরের কয়েকটি স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, তাঁদের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের মধ্যে কারও কারও জ্বর, সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনও স্কুলই পঠনপাঠন বন্ধ রাখার কথা ভাবছে না। বরং, সংক্রমণ আরও বাড়লে এক বারের বদলে পর্যায়ক্রমে পড়ুয়াদের ক্লাসে আনা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে স্কুলগুলি। কিছু স্কুল জানিয়েছে, তারা এ ব্যাপারে অভিভাবকদের মত জানতে চাইবে।
যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার জানান, বৃহস্পতিবার স্কুলের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, আগামী সপ্তাহ থেকে ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়াদের এক দিন অন্তর ক্লাসে ডাকা হবে। অমিতবাবু বলেন, ‘‘ওই দুই শ্রেণির বেশ কয়েক জন পড়ুয়ার এখনও ১২ বছর না হওয়ায় তারা করোনার প্রতিষেধক পায়নি। মূলত তাদের কথা ভেবে আমরা ঠিক করেছি, এক দিন অন্তর ওই দুই শ্রেণির ছাত্রদের ডাকলে দূরত্ব-বিধি মেনে ক্লাস করাতেও সুবিধা হবে।’’ তিনি জানান, তাঁদের প্রাথমিক বিভাগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারা ইতিমধ্যেই এক দিন অন্তর স্কুলে আসছে। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘সংক্রমণ বাড়লেও আমরা আবার ক্লাস বন্ধ করার কথা ভাবছি না। যতটা সম্ভব সতর্কতা মেনেই স্কুল চালাতে হবে।’’
স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে তাঁরা বিভিন্ন ক্লাসের পড়ুয়াদের পর্যায়ক্রমে স্কুলে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক বিভাস সান্যাল বলেন, ‘‘কয়েক জন পড়ুয়া চিঠি লিখে আমাদের জানিয়েছে, তারা জ্বর বা সর্দি-কাশির জন্য আসতে পারছে না। তাই সব দিক বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এক দিন অন্তর পড়ুয়াদের আনা হবে অথবা টানা স্কুল চলার মাঝে এক দিন বা দু’দিন ছুটি দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের সংক্রমিত হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়।’’
অন্য দিকে, অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেই তাঁরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতর থেকে এখনও কোনও নির্দেশিকা আসেনি। তাই এই মুহূর্তে আমরা এক দিন অন্তর স্কুল করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। আগামী সপ্তাহে অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠকে বসব। পড়ুয়াদের স্কুলে আসার ব্যাপারে তাঁদের মতামত জানতে চাওয়া হবে। তবে অভিভাবকদের বড় অংশ আগেই জানিয়েছেন, তাঁরা স্কুল বন্ধ না করে পঠনপাঠন চালানোর পক্ষে। তা সত্ত্বেও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে আবার তাঁদেরমত নেব।’’
সরকারি স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, তাঁদের স্কুলের অনেক পড়ুয়ার বাড়িতে অনলাইন ক্লাস করার পরিকাঠামো নেই। ফলে ছাত্রছাত্রীদের এক দিন অন্তর স্কুলে আসতে বললে এমন হতে পারে যে, তারা যে দিন আসবে না, সে দিন বেশির ভাগ পড়ুয়াই পড়াশোনা থেকে দূরে থাকবে। যা কখনওই কাম্য নয়। তাই সরকারি নির্দেশ না পেলে তাঁরা এখনই পর্যায়ক্রমে পড়ুয়াদের আনার কথা ভাবছেন না।
বেসরকারি স্কুলগুলির মধ্যে সাউথ পয়েন্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের এক দিনে স্কুলে আনছেন না। কোন শ্রেণির পড়ুয়ারা কোন দিন আসবে, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, প্রাক্-প্রাথমিকের পড়ুয়াদের জন্য স্কুলে থাকার সময়ও কমিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।