ছত্রধারী: বৃষ্টির মধ্যেই প্রতিষেধক নেওয়ার লম্বা লাইন। সোমবার, বৌবাজারের লেডি ডাফরিন হাসপাতালে। ছবি: সুমন বল্লভ
অক্টোবরেই করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে বলে আগেই আশঙ্কা করেছিলেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞেরা। পরিসংখ্যানও বলছে, অগস্টের মাঝামাঝি থেকে কলকাতায় ফের বাড়তে শুরু করেছে আক্রান্তের সংখ্যা। তবে তার মধ্যেও উত্তরের তুলনায় দক্ষিণ কলকাতায় সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে পুরসভার ১০ নম্বর বরো নিয়ে বেশি মাথাব্যথা ছিল পুর স্বাস্থ্য দফতরের। এ বারেও চিন্তার কারণ সেই ১০ নম্বর বরোই। কারণ, অগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শহরের অন্য বরো এলাকার তুলনায় ১০ নম্বর বরোয় আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি।
পুর স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, অগস্টের মাঝামাঝি থেকে শহরে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই ১০০-র উপরে থাকছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে যেখানে শহরে দিনে ৪০-৫০ জন আক্রান্ত হচ্ছিলেন, সেখানে গত ৮ সেপ্টেম্বর পুর এলাকায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা ছিল ১৫৯। তার পরের পাঁচ দিনে (৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ সেপ্টেম্বর) দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১২২, ১৩১, ১২১, ১২৫ এবং ৯৩।
তবে পুরসভা জানিয়েছে, ২২ অগস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর— এই ২২ দিনে শহরে সব চেয়ে বেশি সংক্রমণ বেড়েছে ১০ নম্বর বরো এলাকায় (৪৭৫ জন)। ওই বরোর ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডের রিজেন্ট এস্টেট, ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের গাঙ্গুলিবাগান, নাকতলা, রামগড়, লক্ষ্মীনারায়ণ কলোনি, যাদবপুর ইত্যাদি এলাকায় সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। প্রসঙ্গত, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়েও এক দিনে (১৮ মে) ৬৫৮ জন সংক্রমিত হয়েছিলেন এই বরো এলাকাতেই। তাই আপাতত পুরসভার চিন্তা বাড়াচ্ছে ফের সেই ১০ নম্বর।
সংক্রমণের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ১২ নম্বর বরো— বাইপাস লাগোয়া বিভিন্ন ওয়ার্ড, যাদবপুরের কিছু অংশ, পূর্ব যাদবপুর, গরফা, নয়াবাদ ইত্যাদি এলাকা। গত ২২ দিনে সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৭ জন। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, তৃতীয় স্থানে রয়েছে ১১ নম্বর বরো, অর্থাৎ গড়িয়া, বাঘা যতীন, পাটুলি ও যাদবপুরের একাংশ। গত ২২ দিনে (২২ অগস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর) সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ২৫০ জন। বাকি শহরের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে এর পরেই রয়েছে ১৪ নম্বর (বেহালা) এবং ১৬ নম্বর বরোর (জোকা) বিভিন্ন এলাকা। গত ২২ দিনে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২২৬ এবং ২২১।
১০ নম্বর বরোয় সংক্রমণ বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে স্থানীয় বরো কোঅর্ডিনেটর তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘প্রতিষেধক নিলেও বেশির ভাগই মানুষই মাস্ক পরছেন না। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ৯৬ এবং ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাজারে মাস্ক না পরলে পুলিশি ধরপাকড় শুরু হয়েছে। পুরসভার তরফেও অটোয় করে প্রতিদিন এলাকায় করোনা সচেতনতার প্রচার চালানো হচ্ছে।’’
তবে বেশ কিছু ওয়ার্ডে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলেও এখনই সেখানে কন্টেনমেন্ট জ়োন করার কথা ভাবছে না পুরসভা। এক পুর স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘তার পরিবর্তে মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োন, অর্থাৎ যে বাড়ি বা আবাসনে কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন সেখানে জীবাণুনাশের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে আক্রান্তের বাড়ি বা আবাসনের সদস্যদের এবং প্রতিবেশীদের সতর্ক করা হচ্ছে।’’ এখনও পর্যন্ত শহরে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আক্রান্তের হার যথেষ্ট কম। তাই পুরসভা এখনই সেফ হোম বা কোয়রান্টিন কেন্দ্র চালু করার কথা ভাবছে না।
তবে জুলাই মাসের নিরিখে অগস্ট-সেপ্টেম্বরে শহরে কোভিড বাড়তে থাকায় সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘‘করোনার প্রতিষেধক নেওয়ার পরে বেশির ভাগ মানুষই করোনা-বিধি মানছেন না। মাস্ক পরছেন না। এই প্রবণতা চলতে থাকলে কিন্তু ফল মারাত্মক হতে পারে।’’ কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘নাগরিকদের কাছে আবেদন, প্রতিষেধক নিলেও বাইরে বেরোনোর সময়ে মাস্ক পরুন। ভিড় করবেন না। করোনা-বিধি কঠোর ভাবে মেনে চলুন।’’